ব্রেকিং নিউজ
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সফিকুর রহমান জ্বালিয়েছেন জ্ঞান প্রদীপের শিখা
নিজস্ব সংবাদ :
- আপডেট সময় ০১:৩২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১০৩৬ বার পড়া হয়েছে
ফয়সল আহমদ রুহেল : মাত্র ২৩ বছর বয়সে শিক্ষকতা জীবন শুরু। শিক্ষকতার মোহ অন্য কোন লাভজনক পেশায় টানতে পারেনি। কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন নৌকা যোগে। কর্মস্থলে যাবার সময় নৌকা ডুবে যায়। সেই যাত্রায় রক্ষা পান। শুধু ক্লাসে পাঠদানের মধ্যেই জ্ঞান বিতরণ সীমাবদ্ধ রাখতেন না। ক্লাসের পুরোটা সময় জ্ঞানের আলোয় মাতিয়ে রাখতেন। গুণী শিক্ষক মো. সফিকুর রহমান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমনি বহু পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক।
জন্ম :
মো. সফিকুর রহমান ১৯৪৩ সালের ৪ এপ্রিল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পাগুরিয়া এর আখাইলকুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মো. ছিপত, মাতা রশিদা বেগম। পিতার পেশা ছিল কৃষি। ভাই বোন ৩ জনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ।
শিক্ষাজীবন :
মো. সফিকুর রহমানের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু আখাইল কুড়া জুনিয়র মাদ্রাসা থেকে। মাধ্যমিক শিক্ষায় তখনকার সময় দাখিল ছিল না। তিনি ১৯৬১ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে মৌলভীবাজার সিনিয়র মাদ্রাসা হতে আলীম ফাইনাল পরীক্ষায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি ১৯৬৩ সালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা হতে ফাজিল পরীক্ষায় ৩য় বিভাগ পান।
কর্মজীবন :
মো. সফিকুর রহমান ১৯৬৬ সাল মৌলভীবাজান সদর উপজেলার আজমনি বহু পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পর সহকারী শিক্ষক পদ হতে ২০০৩ সালে অবসরে চলে যান।
একটি স্মরণীয় ঘটনা :
মো. সফিকুর রহমান স্যার চাকুরীকালীন সময়ে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে হতো। একদিন কর্মস্থলে যাবার সময় নৌকা ডুবে যায়। তখন তিনি অনেক কষ্টে নদী পার হন। এই নৌকাতেই ছিল স্যারের এক প্রতিবেশী দশম শ্রেণীর ছাত্র। বর্ষার মাঝামাঝি সময় হওয়ায় নদী পানিতে সম্পূর্ণ ভরা ছিল। সেই নদী পার হতে পারেনি ফলে সে পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রতিবেশী সবাই তাঁকে দেখতে আসে এবং সাথে ওই মৃত ছেলেটির মা-ও আসেন। ওই ছেলের মা মো. সফিকুর রহমান স্যারকে দেখে খুশি হয়ে বলেন, ভাতিজা আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়ে এনেছেন। আমার ছেলে মনে হয় আগের নৌকায় চলে গেছে। তিনি জানতেন-ই না যে তার সন্তান আর বেঁচে নেই। এই ঘটনা আজও মো. সফিকুর রহমান স্যারকে পীড়া দেয়।
পারিবারিক :
মো. সফিকুর রহমান স্যার ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক ছিলেন। ১ম ছেলে সোহেল আহমদ লন্ডন প্রবাসী। ২য় ছেলে তোফায়েল আহমদ আংশিক প্রতিবন্ধী। ১ম মেয়ে রাশেদা বেগম-সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২য় মেয়ে জেসমিন নাহার-প্রভাষক, বরমচাল স্কুল এন্ড কলেজ।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
শ্রদ্ধেয় মো. সফিকুর রহমান দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষকতার মত মহৎ পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তাঁর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী আজ সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠিত। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. সফিকুর রহমান শিক্ষার্থীদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে জ্বালিয়েছিলেন জ্ঞান প্রদীপের শিখা। একজন সুশিক্ষক হিসেবে সকলের কাছে তিনি শ্রদ্ধার আসন গড়ে তুলেন। তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
ট্যাগস :