ঢাকা ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটচাঁদপুর ভিক্ষুক মামুনের আত্নত্যাগ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:২৬:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
কোটচাঁদপুর প্রতিনিধিঃ নিজের ভিক্ষার টাকা,অন্য ভিক্ষুককের হাতে তুলে দিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন শারিরীক প্রতিবন্দী ভিক্ষুক মামুন হোসেন ।
বুধবার সকালে এ দৃশ্যটি দেখা যায় কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডের এক চায়ের দোকানে।
জানা যায়, কয়েকদিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে মানুষের কাজ কর্ম ব্যহত হচ্ছে। এরপরও আয় রোজগার করতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে অনেকে।এদের মধ্যে দেখা যায় দুই জন ভিক্ষুককে। এদের ১ জন বয় বৃদ্ধ রাহেলা খাতুন (৭০),আরেকজন শারিরীক প্রতিবন্দী মামুন হোসেন । মামুন বাসে  ভিক্ষা করে,আর রাহেলা কোটচাঁদপুর শহরের দোকান আর বাসা বাড়িতে। বুধবার  সকাল ৯ টা।  মামুন বসে আছেন কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডের বাস কাউন্টারের পাশের চায়ের দোকানে। হঠাৎ ওখানে এসে পৌছাল বয় বৃদ্ধ রাহেলা খাতুন(৭০)।
তিনিও ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। প্রতিদিনের ন্যায় আজও সকালে তিনি বাড়ি থেকে  বের হন ভিক্ষার জন্য। তবে তাতে বাদ সাদেন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টিতে তাঁর গায়ের কাপড়ের অধিকাংশ ছিল ভেজা। তিনিও বসলেন ভিক্ষুক মামুনের পাশে। এর কিছুক্ষন পর আলাপ চারিতা করতে দেখা যায় ওই দুই জনের মধ্যে। একপর্যায়ে মামুন তাঁর পকেট থেকে টাকা বের করে হাত বাড়িয়ে দেন রাহেলার দিকে। নিতে বলেন টাকা গুলো। রাহেলা টাকাটা হাতে নেন।
এ দিকে এ দৃশ্য দেখেন স্থানীয় অনেকে। হতবাক হন মামুনের এ আত্মত্যাগ দেখে। মামুন কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে মামুন দ্বিতীয় ছেলে। মামুন বলেন,জন্ম থেকে আমি প্রতিবন্দী ছিলাম না। ছোট বেলায়  পোলিও হওয়ায় আমি প্রতিবন্দী হয়েছি। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা বৃক্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। এ ছাড়া সরকার থেকে প্রতিবন্দী ভাতাও পেয়ে থাকি,তবে সেটা আমার পিতা নিয়ে খরচ করেন। চাইতে গেলে গোলযোগ করেন আমার সঙ্গে। এ কারনে ভিক্ষার টাকা নিয়ে গিয়ে আমি বাক্সে রাখি।
তিনি বলেন,প্রতিনিয়ত আমি বাসে ভিক্ষা করি। এতে আমার আয় রোজগার খারাপ হয় না। এ কারনে মায়ের বয়সের বৃদ্ধাকে ভিজা অবস্থায় দেখে আমার কস্টো লেগেছিলা।তিনি আমাকে বলেছিল বৃষ্টির কারনে আজ কোন ভিক্ষা হয়নি। এ কারনে আমার ভিক্ষা করা কিছু টাকা তাকে দিয়েছি। মামুন বলেন,আমি প্রতিবন্দী হলেও বাসে গেলেই ভিক্ষা পাচ্ছি। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় ওনি তো কোথায় যেতে পারছে না। তাই কিছুটা দিয়ে সহায়তা করলাম।
জানা গেছে,ইতোমধ্যে  মামুন বিয়ে করেছেন। সংসার জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাহেলা খাতুন কোটচাঁদপুর উপজেলার মুরুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর হল স্বামী মারা গেছেন। রেখে গেছেন দুইটি সন্তান। যার একটি মেয়ে। আরেকটি ছেলে। এদের দুই জনই প্রতিবন্দী বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন,রাহেলার শুধু মাত্র ভিটে মাটি আছে। আর দুটি সন্তানই তাঁর প্রতিবন্দী। তবে তারা সরকারি ভাতার আওতায় রয়েছেন। আর বাকিটা জোগাড় হয় তাঁর ভিক্ষার টাকায়।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কোটচাঁদপুর ভিক্ষুক মামুনের আত্নত্যাগ

আপডেট সময় ০৩:২৬:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
কোটচাঁদপুর প্রতিনিধিঃ নিজের ভিক্ষার টাকা,অন্য ভিক্ষুককের হাতে তুলে দিয়ে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন শারিরীক প্রতিবন্দী ভিক্ষুক মামুন হোসেন ।
বুধবার সকালে এ দৃশ্যটি দেখা যায় কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডের এক চায়ের দোকানে।
জানা যায়, কয়েকদিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে মানুষের কাজ কর্ম ব্যহত হচ্ছে। এরপরও আয় রোজগার করতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হয়েছে অনেকে।এদের মধ্যে দেখা যায় দুই জন ভিক্ষুককে। এদের ১ জন বয় বৃদ্ধ রাহেলা খাতুন (৭০),আরেকজন শারিরীক প্রতিবন্দী মামুন হোসেন । মামুন বাসে  ভিক্ষা করে,আর রাহেলা কোটচাঁদপুর শহরের দোকান আর বাসা বাড়িতে। বুধবার  সকাল ৯ টা।  মামুন বসে আছেন কোটচাঁদপুর কলেজ বাসস্ট্যান্ডের বাস কাউন্টারের পাশের চায়ের দোকানে। হঠাৎ ওখানে এসে পৌছাল বয় বৃদ্ধ রাহেলা খাতুন(৭০)।
তিনিও ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। প্রতিদিনের ন্যায় আজও সকালে তিনি বাড়ি থেকে  বের হন ভিক্ষার জন্য। তবে তাতে বাদ সাদেন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টিতে তাঁর গায়ের কাপড়ের অধিকাংশ ছিল ভেজা। তিনিও বসলেন ভিক্ষুক মামুনের পাশে। এর কিছুক্ষন পর আলাপ চারিতা করতে দেখা যায় ওই দুই জনের মধ্যে। একপর্যায়ে মামুন তাঁর পকেট থেকে টাকা বের করে হাত বাড়িয়ে দেন রাহেলার দিকে। নিতে বলেন টাকা গুলো। রাহেলা টাকাটা হাতে নেন।
এ দিকে এ দৃশ্য দেখেন স্থানীয় অনেকে। হতবাক হন মামুনের এ আত্মত্যাগ দেখে। মামুন কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে মামুন দ্বিতীয় ছেলে। মামুন বলেন,জন্ম থেকে আমি প্রতিবন্দী ছিলাম না। ছোট বেলায়  পোলিও হওয়ায় আমি প্রতিবন্দী হয়েছি। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষা বৃক্তি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। এ ছাড়া সরকার থেকে প্রতিবন্দী ভাতাও পেয়ে থাকি,তবে সেটা আমার পিতা নিয়ে খরচ করেন। চাইতে গেলে গোলযোগ করেন আমার সঙ্গে। এ কারনে ভিক্ষার টাকা নিয়ে গিয়ে আমি বাক্সে রাখি।
তিনি বলেন,প্রতিনিয়ত আমি বাসে ভিক্ষা করি। এতে আমার আয় রোজগার খারাপ হয় না। এ কারনে মায়ের বয়সের বৃদ্ধাকে ভিজা অবস্থায় দেখে আমার কস্টো লেগেছিলা।তিনি আমাকে বলেছিল বৃষ্টির কারনে আজ কোন ভিক্ষা হয়নি। এ কারনে আমার ভিক্ষা করা কিছু টাকা তাকে দিয়েছি। মামুন বলেন,আমি প্রতিবন্দী হলেও বাসে গেলেই ভিক্ষা পাচ্ছি। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় ওনি তো কোথায় যেতে পারছে না। তাই কিছুটা দিয়ে সহায়তা করলাম।
জানা গেছে,ইতোমধ্যে  মামুন বিয়ে করেছেন। সংসার জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, রাহেলা খাতুন কোটচাঁদপুর উপজেলার মুরুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর হল স্বামী মারা গেছেন। রেখে গেছেন দুইটি সন্তান। যার একটি মেয়ে। আরেকটি ছেলে। এদের দুই জনই প্রতিবন্দী বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন,রাহেলার শুধু মাত্র ভিটে মাটি আছে। আর দুটি সন্তানই তাঁর প্রতিবন্দী। তবে তারা সরকারি ভাতার আওতায় রয়েছেন। আর বাকিটা জোগাড় হয় তাঁর ভিক্ষার টাকায়।