৫ জন গুণী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পেলেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক-২০২২
- আপডেট সময় ০৩:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২
- / ৪৪৬ বার পড়া হয়েছে
মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনদ্দশায় সহযোগিতা ও তাদের কাজের স্বীকৃতিকে সমাজে উপস্থাপন করার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন’। সিলেট জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক-২০২২ এ ভুষিত করে সংস্থাটি।
এছাড়া সিলেট বিভাগের ২৪ জন শিক্ষককে সম্মাননা দেয় ফাউন্ডেশনটি। দুই ক্যটাগরিতে এই সম্মনানা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বন্দরবাজার রাজা জিসি হাইস্কুলের হলরুমে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদরেকে সম্মানিত করা হয়।
গুণী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ। রাজা জিসি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মুমিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিলেট সরাকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফৌজিয়া আক্তার। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কবির খান।
অন্যানের মধ্যে বক্তব্য দেন রাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন আহমদ, নসিবা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসরাইল আলী, রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম।
পরে সম্মাননাপ্রাপ্ত ২৪ শিক্ষক ও তাদের পরিবারের হাতে বায়োগ্রাফি তুলে দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৫ জনকে দেওয়া হয় আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া সম্মননাপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষককে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- সিলেট সদর উপজেলার মো. আব্দুর রাজ্জাক, সাদ ওবায়দুল লতিফ চৌধুরী, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় মো. রমজান আলী, মো. ফয়জুল হক চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাজী ময়ুব আলী, মো. আব্দুল মুক্তাদির, গোলাপগঞ্জ উপজেলার রজত চক্রবর্ত্তী, মিছবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার উপজেলার মো. মজির উদ্দিন আনসার, মো. ইসলাম উদ্দিন, জকিগঞ্জ উপজেলায় মো. মাহতাব উদ্দিন, আকরাম আলী, বালাগঞ্জ উপজেলায় প্রমোদ চন্দ্র দে কানু, মোহাম্মদ আছমত আলী, ওসমানীনগর উপজেলায় বিন্দু মাধব ভট্টাচার্য্য,ু ধীরেন্দ্র কুমার নাথ, কানাইঘাট উপজেলায় ফয়জুল ইসলাম, মো. মহিউদ্দিন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় মো. সামছুদ্দিন, মো. শুয়াইব আলী, জৈন্তাপুর উপজেলায় মো. সিরাজুর রহমান, মো. হুসাইন আহমদ এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শৈলেন্দ্র চন্দ্র দাশ ও সুভাষ রঞ্জন তালুকদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, অসহায়, আর্থিক সঙ্কটে থাকা শিক্ষকদের বাছাই করে তাদেরকে সম্মানিত করছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন’। প্রবাসে থেকে দেশের শিক্ষকদের জন্য এমন কাজ অত্যন্ত্য গৌরবের। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনদ্দশায় সহযোগিতা ও তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হলে শিক্ষকরা এই পেশায় আসতে অনুপ্রাণিত করবে।
তজম্মুল আলী একজন মানুষ গড়ার কারিগর। ভালোবেসে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীরা নাম রাখেন টি আলী স্যার। টি আলী স্যার সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার বৃহত্তর জলঢুপে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছর হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি হোস্টেল সুপারের মত গুরু দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৯ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান এই শিক্ষকের নামে প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন।
মূলত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মাননা ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষকদের সহযোগিতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ফাউন্ডেশনটি। আদর্শবান শিক্ষক আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা শিক্ষকদের সন্ধান অথবা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন রুচিশীল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যাদের খোঁজ খবর অনেকে রাখেন না তাদেরকে খোঁজে কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে সিলেট বিভাগে আদর্শ শিক্ষকদের নিয়ে কাজ শুরু করে। ফাউন্ডেশনটি আদর্শ শিক্ষকদের সম্মাননা পদকে মনোনয়নে একটি বোর্ড গঠন করে। এই মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান হলেন এবং টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কবির খান।
বিভাগের চার জেলার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে সিলেট জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়ন জরিপ চালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন বোর্ড সিলেট জেলার ১২ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২১ সালের জন্য ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রকাশ করে।
এছাড়া তাদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের পর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বর্ণাঢ্য জীবনী প্রকাশ করে। এরপর মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রত্যেকের জীবনী সুন্দর ফ্রেমবন্দি করে রাখা হয়। অনুষ্ঠানের দিন তাদের প্রত্যেকের হাতে তা তুলে দেওয়া হবে। এছাড়া যেসব মনোনয়নপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা কোন কারনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারলেও তাদের ফ্রেমবন্দি জীবনী বাড়িতে পৌঁছিয়ে দেবে সংস্থাটি।
সিলেট জেলা ছাড়াও মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় এ সংস্থা গুণী শিক্ষকদের জীবিত অবস্থায় সম্মাননা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।