ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
সিলেট বিভাগে দুইটি স্পেশাল ট্রেন চালুসহ ৮ দফা দাবিতে শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ে স্টেশনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজারে মোটরসাইকেলে প্রাণ গেল স্কুল ছাত্রের মৌলভীবাজারে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সংবর্ধনা দিল মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মৌলভীবাজারে কনস্টেবল নিয়োগ প্রাথমিক বাছাই শেষে ৩৪৭জন নির্বাচিত বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি শ্রীমঙ্গল উপজেলা কমিটি গঠন সভাপতি জাকির ও সাধারণ সম্পাদক কল্যাণ দেব মৌলভীবাজারে বিএনপির বিতর্কিত নেতা মতিন বক্স সহ দুই নেতার পদ স্থগিত মৌলভীবাজার শহরের প্রধান সড়কে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আর চলবে না মানবতার স্বার্থে সবাই এগিয়ে আসুন লিভার, কিডনি রোগে আক্রান্ত দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনগর উপজেলার উদ্যোগে শিক্ষা বৈঠক অনুষ্ঠিত অনলাইনে টিকেটের আড়ালে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট চট্রগ্রামের ট্রেনের যাত্রীদের নানা দুর্ভোগ

কমলগঞ্জে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৩৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
  • / ৩৯৬ বার পড়া হয়েছে

আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরন অনুষ্ঠান বুধবার ২৩ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে। এছাড়া বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির উপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem)। দেশব্যাপি খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব (বর্ষবরণ) পুঞ্জিগুলোতে বুধবার উৎসবের আমেজে উৎসবে মিলিত হবে তারা এই দিনে। বর্ণিল সাজে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা স্জাবে।

এ উৎসবের মাধ্যমে তাদের বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি ও খেলাধূলাকে তুলে ধরা হবে। আদিবাসী খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসবের মূল আকর্ষণ ঐহিত্যবাহী খাসি পোশাক পরে মেয়েদের নাচ-গান, তৈল যুক্ত একটি বাঁশে উঠে উপরে রাখা মুঠোফোন গ্রহন, দুটি পুকুরে বড়শী দিয়ে মাছ শিকার, তীর ধনুক খেলা, গুলতি চালানো বিভিন্ন ধরণের তাদের নিজস্ব ভাষাতে গান গেয়ে অতিথিদের আনন্দ দেওয়া হবে। বেশ বড় আকারে মেলাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।.

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে মাগুরছড়া পুঞ্জির ইয়োথ ক্লাবের উদ্যোগে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বুধবার। বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জিডিসন প্রধান সুচিয়াঙ এর সভাপতিত্বে ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্মী জানান. খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’।

চায়ের রাজধানী খ্যাত পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারে বসবাস করেন নানা ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ। এ জনপদে রয়েছে বহুভাষা ও বৈচিত্র্যমন্ডিত সাংস্কৃতিক আবহ। মৌলভীবাজার জেলায় যে কয়টি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন তার মধ্যে খাসিয়া সম্প্রদায় একটি। এখানের খাসিয়ারা মূলত সিনতেং গোত্রভুক্ত জাতি। তাদের জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। ভাত ও মাছ তাদের প্রধান খাদ্য। তারা মাতৃপ্রধান পরিবারে বসবাস করে। তাদের মধ্যে কাঁচা সুপারি ও পান খাওয়ার প্রচলন খুব বেশি।

খাসিয়াদের উৎপাদিত পান (খাসিয়া পান নামে পরিচিত) বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। এ অঞ্চলের অন্যান্য আদিবাসীর মতো একটি প্রাচীন সম্প্রদায় হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন টিলা এলাকায় তাদের বসবাস। দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করলেও তারা অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। খাসিয়ারা এক সময় প্রকৃতির পূজারী হলেও বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মালম্বী অনুসরণ করছেন, তবে সিলেটের জৈন্তা এলাকায় কিছু খাসিয়ারা এখনোও প্রকৃতির পূজা করে থাকেন।

খাসিয়াদের মাতৃভাষা খাসি, বর্তমানে এদের কোন লিখিত কোনো ভাষা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে এক সময় তাদের লিখিত ভাষা ছিল কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। বৃহত্তর সিলেটে প্রায় ৮০টির মতো খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়ারা কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খাসি সেং কুটস্নেম অর্থাৎ বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১৫৮তম বর্ষকে বিদায় ও ১৫৯তম বর্ষকে বরণ করে নিবে খাসিয়া জনগোষ্ঠী।

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। পরদিন ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় খাসি বর্ষ বরণ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কমলগঞ্জে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব

আপডেট সময় ১১:৩৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২

আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরন অনুষ্ঠান বুধবার ২৩ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে। এছাড়া বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

মাগুরছড়া ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে বাঁশের খুঁটির উপর প্রাকৃতিক পরিবেশে নারিকেল গাছের পাতার দিয়ে ছাউনী দিয়ে আলোচনা সভার মঞ্চ তৈরি করা হয়। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় ‘খাসি সেং কুটস্নেম’। খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ (Khasi Seng Kutsnem)। দেশব্যাপি খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসব (বর্ষবরণ) পুঞ্জিগুলোতে বুধবার উৎসবের আমেজে উৎসবে মিলিত হবে তারা এই দিনে। বর্ণিল সাজে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা স্জাবে।

এ উৎসবের মাধ্যমে তাদের বিলুপ্ত প্রায় সংস্কৃতি ও খেলাধূলাকে তুলে ধরা হবে। আদিবাসী খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসবের মূল আকর্ষণ ঐহিত্যবাহী খাসি পোশাক পরে মেয়েদের নাচ-গান, তৈল যুক্ত একটি বাঁশে উঠে উপরে রাখা মুঠোফোন গ্রহন, দুটি পুকুরে বড়শী দিয়ে মাছ শিকার, তীর ধনুক খেলা, গুলতি চালানো বিভিন্ন ধরণের তাদের নিজস্ব ভাষাতে গান গেয়ে অতিথিদের আনন্দ দেওয়া হবে। বেশ বড় আকারে মেলাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।.

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে মাগুরছড়া পুঞ্জির ইয়োথ ক্লাবের উদ্যোগে খাসিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বুধবার। বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জিডিসন প্রধান সুচিয়াঙ এর সভাপতিত্বে ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্মী জানান. খাসিয়া আদিবাসী ভাষায় এ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’।

চায়ের রাজধানী খ্যাত পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারে বসবাস করেন নানা ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ। এ জনপদে রয়েছে বহুভাষা ও বৈচিত্র্যমন্ডিত সাংস্কৃতিক আবহ। মৌলভীবাজার জেলায় যে কয়টি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন তার মধ্যে খাসিয়া সম্প্রদায় একটি। এখানের খাসিয়ারা মূলত সিনতেং গোত্রভুক্ত জাতি। তাদের জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। ভাত ও মাছ তাদের প্রধান খাদ্য। তারা মাতৃপ্রধান পরিবারে বসবাস করে। তাদের মধ্যে কাঁচা সুপারি ও পান খাওয়ার প্রচলন খুব বেশি।

খাসিয়াদের উৎপাদিত পান (খাসিয়া পান নামে পরিচিত) বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। এ অঞ্চলের অন্যান্য আদিবাসীর মতো একটি প্রাচীন সম্প্রদায় হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন টিলা এলাকায় তাদের বসবাস। দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করলেও তারা অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। খাসিয়ারা এক সময় প্রকৃতির পূজারী হলেও বর্তমানে খ্রিস্টান ধর্মালম্বী অনুসরণ করছেন, তবে সিলেটের জৈন্তা এলাকায় কিছু খাসিয়ারা এখনোও প্রকৃতির পূজা করে থাকেন।

খাসিয়াদের মাতৃভাষা খাসি, বর্তমানে এদের কোন লিখিত কোনো ভাষা নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে এক সময় তাদের লিখিত ভাষা ছিল কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। বৃহত্তর সিলেটে প্রায় ৮০টির মতো খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়ারা কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খাসি সেং কুটস্নেম অর্থাৎ বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।

খাসিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালি ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। বর্ষপুঞ্জি অনুযায়ী ১৫৮তম বর্ষকে বিদায় ও ১৫৯তম বর্ষকে বরণ করে নিবে খাসিয়া জনগোষ্ঠী।

ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর খাসি বর্ষ বিদায় ‘খাসি সেঙ কুটস্যাম’ পালন করা হয়। পরদিন ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় খাসি বর্ষ বরণ।