মৌলভীবাজারে গ্যাস সার্ভের বিস্ফোরণে আতঙ্কিত এলাকাবাসী
- আপডেট সময় ১০:৪৫:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৬৬৬ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ায় গ্যাস অনুসন্ধানে গ্রামে গ্রামে সকাল থেকে সন্ধ্যা একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
এতে আতঙ্কিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। ড্রিলিংয়ের পর মাটির ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরে এই বিস্ফোরণ ঘটানোর কারণে পাকা ও আধা
পাকা বসতবাড়িতে কম্পন হচ্ছে বার বার। শিশুসহ বয়স্করা অসুস্থ হয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বিস্ফোরণে টিউবওয়েল, পাকা দেয়ালে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। এ নিয়ে চা শ্রমিকদের পুরনো ঘরে ফাটল দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা গ্রাম থেকে গত তিনদিন যাবত বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি)। তবে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি) কর্মকর্তা বলছেন যেখানে বাড়ী ঘর থেকে প্রায় ১০০/৮০ ফুট দুরে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে এ জন্য বাড়ী ঘরের কোন ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভবনা নাই বলে দাবি করেন।
জানা যায়, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিজিপি, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন।এসব উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে, বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও ড্রিলিং করে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এতে অসুস্থ রোগী ও শিশুরা ভয়ে আতঙ্কিত রয়েছেন। এছাড়াও ফসলি জমি বিনষ্ট, মাটি ধ্বস, পাকা দেয়ালে ফাটল, টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা, পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি সহ সর্বোপরি ভূমিকম্পের সময়ে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
দেওছড়া চা বাগানের রাজু গোড় বলেন, বিস্ফোরণের কারণে ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এভাবে চা বাগানে আরও অনেক শ্রমিকের দেয়ালে ফাটল দিচ্ছে।শ্রীসূর্য্য গ্রামের সমাজকর্মী কবির আহমদ, ধূপাটিলা গ্রামের সায়েদ মিয়া, আক্তার মিয়া, শেরওয়ান আলী, আতিকুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তারা দল বেঁধে কাজের কারণে জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। বাড়িঘরের আশেপাশে যে হারে বিস্ফোরণ হচ্ছে তাতে আতঙ্কে থাকতে হয় সব সময়। আর শিশু ও অসুস্থ লোকজনের জন্য আরো বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরের আশেপাশে এভাবে অজস্র বিস্ফোরণে ঘরের পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দিতে পারে। এভাবে গ্রামের ভেতরে অভ্যাহত বিস্ফোরণ উচিত হয়নি বলে তারা দাবি করেন।
পরিবেশ কর্মী নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, বসতবাড়ির সন্নিকটে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে তাতে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হবে না, এটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতির কারণ। দিনে দু’তিনশ’ বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে মাটির স্তর পরিবর্তন, পানি দূষণ, টিউবওয়েলে সমস্যা, বন্যা ও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ও মাটি ধ্বসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। সর্বোপরি পরিবেশ, প্রতিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। এধরণের কার্যক্রমে প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বসতবাড়ি থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সার্ভে করা উচিত।চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর পাবলিক রিলেশন অফিসার ইমাম হোসেন মোবাইল ফোনে আলাপকালে বলেন, পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে এ সার্ভে কাজ চলমান রয়েছে। কাজের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে সার্ভে ও ড্রিলিং কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, বাড়ী ঘর থেকে প্রায় ১০০/৮০ ফুট দুরে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে এ জন্য বাড়ী ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভবনা নাই। মৌলভীবাজারের ২০টিসহ সারাদেশে ৪৯টি চা বাগানে কাজ করারও অনুমতি রয়েছে। তবে এসব কাজের জন্য ফসলের কিংবা বাড়িঘরে কোন ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, গ্যাস কোম্পানীর লোকজন বলেছে কারও ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার মোবাইল ফোনে বলেন, বিস্ফোরনে আতঙ্কিতের বা কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অবশ্য তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে গ্যাস কোম্পানী।কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সার্ভে শুরু করেছে। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অবশ্য তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বাধ্য থাকিবে গ্যাস কোম্পানী।