ঢাকা ১০:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজিম উদ্দিন স্যার : উন্নত মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ একজন মানুষ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২
  • / ৪৪৯ বার পড়া হয়েছে

ফয়সল আহমদ রুহেল : মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের ছোট একটি গ্রাম নাজির খাঁ। ওই গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ তথা বেড়ে ওঠা সেখানকার চিত্র অমানবিক অবর্ণনীয়। এমনকি হতদরিদ্র পরিবারের এই মানুষটির বাড়িতে সভ্যতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। নিজেদের ঘরের ছাউনি ছিল খড়কুটোর। বৃষ্টির দিন বৃষ্টি পড়তো। বৃষ্টিতে বই-খাতা বালিশ ভিজে যেত। পিতা ছিলেন একজন দিনমজুর। তিন বেলা খাবার জুটেনি পরিবারের। লুঙ্গি পরে স্কুলে যেতেন। এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন অন্যের ধার করা শার্ট প্যান্টে। এ অমানবিকতার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনের সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা বলছি। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক।

জন্ম : মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ১৯৪৭ সালের ১৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের নাজির খাঁ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু স্টাডি গ্যাপ থাকায় জন্ম তারিখ এনআইডি ও সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৫ ইংরেজি। মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনের পিতা মৃত কটু মিয়া ও মাতা মৃত তরিজা বেগম। পিতার পেশা ছিল দিনমজুর। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের বড়থল গ্রামে বসবাস করছেন। কটু মিয়া এক ছেলে ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। ভাইবোনদের মধ্যে মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন চতুর্থ ।

শিক্ষা জীবন :
মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালে সুজানগর মক্তব স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু এবং ১৯৫৬ সালে সেন্টার পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫৭ সালে ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু এবং ১৯৫৯ সালে ৮ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে পিতার আর্থিক অস্বচ্ছলতার দায়ে দীর্ঘ ৮ বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকে। পুনরায় ১৯৬৮ সালে ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৭১ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মানবিক বিভাগে ইংরেজি সহ মোট ৬টি বিষয়ে লেটারমার্কস সহ ১ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।

১৯৭৪ সালে কুলাউড়া কলেজ হতে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে মানবিক বিভাগে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালে কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে ১৭ মাস ডিগ্রিতে ক্লাস করার পর পিতার অসুস্থতার কারনে পরিবারের উপার্জনসহ সকল দায়িত্ব মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনের উপর অর্পিত হলে অতীব ঝামেলায় পড়ে ডিগ্রি পরীক্ষা দিতে পারেননি।

কর্মজীবন :
মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৭৫ সালে ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে সরকারের আদেশে প্রত্যেক স্কুলে ফিজিক্যাল শিক্ষক বাধ্যতামূলক হলে তিনি ফিজিক্যাল ট্রেনিং সম্পন্ন করে সেখানে ফিজিক্যাল শিক্ষকেরও দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতার পর ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি অবসর গ্রহন করেন।

বর্ণাঢ্য জীবন : মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন মূলত একটি হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ তথা বেড়ে ওঠা সেখানকার চিত্র ও মানবজীবন সর্বনিম্নমানের। এককথায় বলতে গেলে সে এক করুণ, অমানবিক অবর্ণনীয় দৃশ্যপট। পিতা ছিলেন একজন দিনমজুর। দাদার ১০ শতক বাস্তুভিটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই মজুরীই ছিল একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। তিনি ছাড়া পরিবারে আর কেউ উপার্জনকারী ছিলেন না। পিতা মজুরি করে যা পেতেন তা দ্বারা তিন বেলা খাবার তথা পরিবারের প্রয়োজন মিটানো একেবারে অসম্ভব হয়ে উঠতো। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। তাদের থাকার ঘরের ছাউনি ছিল খড়কুটোর। বৃষ্টির দিন বৃষ্টি পড়তো। কেউ ঘুমাতে পারতো না। খেতা বালিশ ভিজে যেত। বৃষ্টির দিনে বই খাতা বালিশ রক্ষা করতে বাবার তৈরি লতা পাতা দিয়ে তৈরি ছাতা ধরে। বৃষ্টির পরে ঘরে যে পানি ঢুকতো তা থালা বাসন দিয়ে সেচ করতে হত। অনেক সময় ঘরের ছাউনির নেরা নিজে মাঠ থেকে কেটে আনতেন। কটু মিয়া ছেলে আজিম উদ্দিনকে শার্টপ্যান্ট, পাঠ্যপুস্তক কিনে দিতে পারতেন না। আজিম উদ্দিন স্বল্প দামের শার্ট ও লুঙ্গি পরে স্কুলে যেতেন। শিক্ষকরা তাঁকে প্যান্ট পরে আসার কথা বলতেন। তিনি বলতেন প্যান্ট নাই। শিক্ষকরা তাঁর কথা শুনে শুধু তাকিয়ে থাকতেন, কিছু বলতেন না। পাঠ্যপুস্তক না থাকায় সহপাঠী কাছ থেকে ধার করে কপি করে পড়তেন। জন্মস্থানের গ্রামের কোন রাস্তা ছিল না বিধায় বছরের নয় মাস নৌকায় চলাচল করতে হত। কিন্তু পিতার নৌকা বানানোর সামর্থ্য ছিল না। তাই ৯ মাসই তাঁকে জলের মধ্যদিয়ে অর্ধেক মাইল রাস্তা পার হয়ে স্কুলে যেতে হত। তাছাড়া অনেক সময় পানির মধ্য দিয়ে খালিগায়ে যাওয়ার সময় গলা পর্যন্ত ডুবে যেত এবং এরাইল নামের একপ্রকার ধারালো ঘাস দায়ের মত শরীর কেটে ফেলতো। ঐসব কাটা জায়গায় পুঁজ হত, শরীরে ঘা হয়ে যেত, তারপরও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতেননা আজিম উদ্দিন। রাতে শোবার জন্য সুপারি গাছের কান্ড দিয়া নিজে নিজে খাট তৈরি করতেন। সুপারি গাছের বাকলের খাট হওয়ায় অনেক সময় ছারপোকা রাতে ঘুমাতে দিত না। এছাড়া, নিজে নিজে লাকড়ির বাকল দিয়ে চেয়ার টেবিলের মত করে তৈরি করতেন কোনমতে পড়াশোনা করার জন্য। প্রাইমারি স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা ইউনিয়নের সেন্টার স্কুলে অনুষ্ঠিত হত। সেন্টার পরিক্ষার প্রথম দিন ঘরে খাবার না থাকায় উপোস অবস্থায় ২ মাইল হেঁটে পরীক্ষা দিতে যান। প্রথম সাবজেক্ট পরীক্ষা শেষ হবার পর বাবা খাবার নিয়ে আসেন, তখন আজিম উদ্দিন চোখের জল মুছতে মুছতে খাবার খান। পরবর্তীতে ঐ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন। এ ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ৮ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে পরিবারের অস্বচ্ছতার দরুন পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৮ বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে, তখন মাটিকাটা সহ সব ধরনের পরিশ্রমের কাজ করে পাশাপাশি বাজারে বাজারে এবং গ্রামে-গঞ্জে বাদাম এবং বেকারি বিস্কুট সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। তখনকার সময় এসএসসি পরীক্ষার সেন্টার ছিল কুলাউড়া নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাই পরীক্ষায় যাওয়ার জন্য আজিম উদ্দিন কিছু পরিচিত লোকের কাছ থেকে শার্ট প্যান্ট ধার নেন। মেট্রিক পরীক্ষা পাস করার পর কুলাউড়া কলেজে ভর্তি হয়ে একইভাবে শার্ট লুঙ্গি পরে কলেজে যেতেন। মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্মৃতিচারণ করে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফি বাবদ ৩৯০ টাকা কলেজের পাওনা দিতে না পারায় ভাইস প্রিন্সিপাল গণি মিয়া স্যার নিজে পরিশোধ করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

স্মরণীয় ঘটনা :
শিক্ষকতা জীবনে একটি ডিঙ্গি নৌকা বানিয়ে নিজে নৌকা চালিয়ে স্কুলে আসতেন। বেশিরভাগ দিন ঝড় তুফানে খোলা মাঠে যথেষ্ট অসুবিধা সৃষ্টি করতো। দীর্ঘ ৫০ বছর পর যাতায়াতের সুবিধার জন্য বর্তমান বড়থল গ্রামে কিছু ভূমি খরিদ করে বাড়ী নির্মাণ করেন। মূলত মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের দীর্ঘ ৮০ বছরের জীবনে জাঁকজমকপূর্ণ কোনো অধ্যায় আসেনি যেহেতু পারিবারিক সাপোর্ট তথা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কখনও পাননি। কিন্তু শিক্ষকতাই ছিল একমাত্র ব্রত এবং এই শিক্ষকের ছাত্রছাত্রীরা এখন বড় বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ব্যবসায়ি, প্রসাশনিক কর্মকর্তা।
স্যারের যত কৃতিত্ব :
২০০৯ সালে সরকারি আদেশে সাবেক বৃহত্তর সিলেট জেলার ৩৫টি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ৩৫ জন ইংরেজির শিক্ষক সিলেটের টিটি কলেজে ইংরেজি ট্রেনিংয়ের আহ্বান করা হলে আজিম উদ্দিনও ছিদ্দিক আলি স্কুলের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং পিরিয়ডে শিক্ষকরা তাঁর কাছ থেকে কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে নিতেন। তিনি অবাক হয়ে যেতেন যে ওরা কিভাবে স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। এমনকি সার্টিফিকেট নেয়ার দিন ও সিলেটের ডিসি স্যারসহ উপস্থিত থেকে ইংরেজিতে বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করলে মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ছাড়া আর কেউ বক্তব্য দিতে পারেননি। এমনকি তদ্রুপভাবে ২০১১ সালে মৌলভীবাজারে ডিসি স্যারের কনফারেন্সে ৯৮ জন প্রফেসর ও শিক্ষকদের মধ্যে আজিম উদ্দিন ইংরেজিতে বক্তব্য দেন। আর কোন শিক্ষক দিতে পারেননি। তিনি যথেষ্ট সম্মান পেয়েছিলেন এবং জীবনের অনেক বড় অর্জনও ছিলো এটি।

স্যারের যত ছাত্র :
এলাকায় গত ২৫/৩০ বছর ধরে যত চেয়ারম্যান মেম্বার হচ্ছেন, তাদের ২/১ জন ছাড়া সবাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের শিক্ষার্থী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছাত্রছাত্রী অসংখ্য রয়েছে। মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডা. জামিল। যিনি আমেরিকার একজন বড় মাপের ফিজিশিয়ান। ডা. ইকবাল, সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশনের অন্যতম চিকিৎসক। ডা. বদরুল বর্তমানে বড়লেখা শহরে নিজস্ব ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন করে মানুষের সেবা করতেছেন। আমেরিকা থেকে ডিগ্রিও নিয়েছেন। জহির উদ্দিন, প্রিন্সিপাল ফুলতলা ডিগ্রি কলেজ। পিযুষ দাস, ম্যানেজার, জনতা ব্যাংক বড়লেখা শাখা। নিজাম উদ্দিন, ম্যানেজার সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লি. শ্রীমঙ্গল। তাছাড়া অসংখ্যজন ব্যাংক প্রধান রয়েছেন।
তাছাড়া অনেক ছাত্রছাত্রী ডাক্তার হচ্ছে, শিক্ষক হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতা হচ্ছে। সবার সাথে স্যারের যোগাযোগ নেই।

পারিবারিক : মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন তিন সন্তানের জনক। ১ম ছেলে মো. সুলতান বিন আজিম- জন্মগত বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। ২য় ছেলে মো. মনসুর বিন আজিম সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে ইংরেজি বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ওভারসীজ কান্ট্রি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার চেষ্টা করতেছেন। একমাত্র মেয়ে ইসমত আরা বিনতে আজিম-ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ১ম ছাত্রী হিসেবে অধ্যায়নরত আছেন। সে ভাইবোনদের মধ্যে ৩য়।

গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে বড়লেখা উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সন্মাননা পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলা ১৪ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।
মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের দীর্ঘ ৮০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে সাদাসিধে ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না বিধায় অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ভালো কিছু করার সুতীব্র ইচ্ছে শক্তি ছিল বলেই এতোদূর এগোতে পেরেছেন। গুণী এই মানুষটি কর্মক্ষেত্রে যেমন সফল তেমনি পরিবার প্রধান হিসেবেও। জীবনের সর্বক্ষেত্রে উন্নত মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ একজন মানুষ হিসেবে সকলের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিলেন স্ব-মহিমায়। তাঁর হাতে গড়া অসংখ্য শিক্ষার্থী স্বদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃতিত্ব অর্জন করে চলেছেন। আমরা মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আজিম উদ্দিন স্যার : উন্নত মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ একজন মানুষ

আপডেট সময় ০১:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২

ফয়সল আহমদ রুহেল : মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের ছোট একটি গ্রাম নাজির খাঁ। ওই গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ তথা বেড়ে ওঠা সেখানকার চিত্র অমানবিক অবর্ণনীয়। এমনকি হতদরিদ্র পরিবারের এই মানুষটির বাড়িতে সভ্যতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। নিজেদের ঘরের ছাউনি ছিল খড়কুটোর। বৃষ্টির দিন বৃষ্টি পড়তো। বৃষ্টিতে বই-খাতা বালিশ ভিজে যেত। পিতা ছিলেন একজন দিনমজুর। তিন বেলা খাবার জুটেনি পরিবারের। লুঙ্গি পরে স্কুলে যেতেন। এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন অন্যের ধার করা শার্ট প্যান্টে। এ অমানবিকতার মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনের সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা বলছি। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক।

জন্ম : মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ১৯৪৭ সালের ১৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের নাজির খাঁ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু স্টাডি গ্যাপ থাকায় জন্ম তারিখ এনআইডি ও সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৫ ইংরেজি। মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনের পিতা মৃত কটু মিয়া ও মাতা মৃত তরিজা বেগম। পিতার পেশা ছিল দিনমজুর। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের বড়থল গ্রামে বসবাস করছেন। কটু মিয়া এক ছেলে ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। ভাইবোনদের মধ্যে মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন চতুর্থ ।

শিক্ষা জীবন :
মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ১৯৫২ সালে সুজানগর মক্তব স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু এবং ১৯৫৬ সালে সেন্টার পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫৭ সালে ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু এবং ১৯৫৯ সালে ৮ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে পিতার আর্থিক অস্বচ্ছলতার দায়ে দীর্ঘ ৮ বছর লেখাপড়া বন্ধ থাকে। পুনরায় ১৯৬৮ সালে ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ১৯৭১ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মানবিক বিভাগে ইংরেজি সহ মোট ৬টি বিষয়ে লেটারমার্কস সহ ১ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন।

১৯৭৪ সালে কুলাউড়া কলেজ হতে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে মানবিক বিভাগে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালে কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে ১৭ মাস ডিগ্রিতে ক্লাস করার পর পিতার অসুস্থতার কারনে পরিবারের উপার্জনসহ সকল দায়িত্ব মোহাম্মদ আজিম উদ্দিনের উপর অর্পিত হলে অতীব ঝামেলায় পড়ে ডিগ্রি পরীক্ষা দিতে পারেননি।

কর্মজীবন :
মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৭৫ সালে ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালে সরকারের আদেশে প্রত্যেক স্কুলে ফিজিক্যাল শিক্ষক বাধ্যতামূলক হলে তিনি ফিজিক্যাল ট্রেনিং সম্পন্ন করে সেখানে ফিজিক্যাল শিক্ষকেরও দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতার পর ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি অবসর গ্রহন করেন।

বর্ণাঢ্য জীবন : মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন মূলত একটি হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি যে গ্রামে জন্মগ্রহণ তথা বেড়ে ওঠা সেখানকার চিত্র ও মানবজীবন সর্বনিম্নমানের। এককথায় বলতে গেলে সে এক করুণ, অমানবিক অবর্ণনীয় দৃশ্যপট। পিতা ছিলেন একজন দিনমজুর। দাদার ১০ শতক বাস্তুভিটা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই মজুরীই ছিল একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। তিনি ছাড়া পরিবারে আর কেউ উপার্জনকারী ছিলেন না। পিতা মজুরি করে যা পেতেন তা দ্বারা তিন বেলা খাবার তথা পরিবারের প্রয়োজন মিটানো একেবারে অসম্ভব হয়ে উঠতো। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। তাদের থাকার ঘরের ছাউনি ছিল খড়কুটোর। বৃষ্টির দিন বৃষ্টি পড়তো। কেউ ঘুমাতে পারতো না। খেতা বালিশ ভিজে যেত। বৃষ্টির দিনে বই খাতা বালিশ রক্ষা করতে বাবার তৈরি লতা পাতা দিয়ে তৈরি ছাতা ধরে। বৃষ্টির পরে ঘরে যে পানি ঢুকতো তা থালা বাসন দিয়ে সেচ করতে হত। অনেক সময় ঘরের ছাউনির নেরা নিজে মাঠ থেকে কেটে আনতেন। কটু মিয়া ছেলে আজিম উদ্দিনকে শার্টপ্যান্ট, পাঠ্যপুস্তক কিনে দিতে পারতেন না। আজিম উদ্দিন স্বল্প দামের শার্ট ও লুঙ্গি পরে স্কুলে যেতেন। শিক্ষকরা তাঁকে প্যান্ট পরে আসার কথা বলতেন। তিনি বলতেন প্যান্ট নাই। শিক্ষকরা তাঁর কথা শুনে শুধু তাকিয়ে থাকতেন, কিছু বলতেন না। পাঠ্যপুস্তক না থাকায় সহপাঠী কাছ থেকে ধার করে কপি করে পড়তেন। জন্মস্থানের গ্রামের কোন রাস্তা ছিল না বিধায় বছরের নয় মাস নৌকায় চলাচল করতে হত। কিন্তু পিতার নৌকা বানানোর সামর্থ্য ছিল না। তাই ৯ মাসই তাঁকে জলের মধ্যদিয়ে অর্ধেক মাইল রাস্তা পার হয়ে স্কুলে যেতে হত। তাছাড়া অনেক সময় পানির মধ্য দিয়ে খালিগায়ে যাওয়ার সময় গলা পর্যন্ত ডুবে যেত এবং এরাইল নামের একপ্রকার ধারালো ঘাস দায়ের মত শরীর কেটে ফেলতো। ঐসব কাটা জায়গায় পুঁজ হত, শরীরে ঘা হয়ে যেত, তারপরও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতেননা আজিম উদ্দিন। রাতে শোবার জন্য সুপারি গাছের কান্ড দিয়া নিজে নিজে খাট তৈরি করতেন। সুপারি গাছের বাকলের খাট হওয়ায় অনেক সময় ছারপোকা রাতে ঘুমাতে দিত না। এছাড়া, নিজে নিজে লাকড়ির বাকল দিয়ে চেয়ার টেবিলের মত করে তৈরি করতেন কোনমতে পড়াশোনা করার জন্য। প্রাইমারি স্কুলের সমাপনী পরীক্ষা ইউনিয়নের সেন্টার স্কুলে অনুষ্ঠিত হত। সেন্টার পরিক্ষার প্রথম দিন ঘরে খাবার না থাকায় উপোস অবস্থায় ২ মাইল হেঁটে পরীক্ষা দিতে যান। প্রথম সাবজেক্ট পরীক্ষা শেষ হবার পর বাবা খাবার নিয়ে আসেন, তখন আজিম উদ্দিন চোখের জল মুছতে মুছতে খাবার খান। পরবর্তীতে ঐ পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান লাভ করেন। এ ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ৮ম শ্রেণিতে ১ম স্থান অধিকার করে পরিবারের অস্বচ্ছতার দরুন পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৮ বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে, তখন মাটিকাটা সহ সব ধরনের পরিশ্রমের কাজ করে পাশাপাশি বাজারে বাজারে এবং গ্রামে-গঞ্জে বাদাম এবং বেকারি বিস্কুট সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। তখনকার সময় এসএসসি পরীক্ষার সেন্টার ছিল কুলাউড়া নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাই পরীক্ষায় যাওয়ার জন্য আজিম উদ্দিন কিছু পরিচিত লোকের কাছ থেকে শার্ট প্যান্ট ধার নেন। মেট্রিক পরীক্ষা পাস করার পর কুলাউড়া কলেজে ভর্তি হয়ে একইভাবে শার্ট লুঙ্গি পরে কলেজে যেতেন। মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্মৃতিচারণ করে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফি বাবদ ৩৯০ টাকা কলেজের পাওনা দিতে না পারায় ভাইস প্রিন্সিপাল গণি মিয়া স্যার নিজে পরিশোধ করে তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

স্মরণীয় ঘটনা :
শিক্ষকতা জীবনে একটি ডিঙ্গি নৌকা বানিয়ে নিজে নৌকা চালিয়ে স্কুলে আসতেন। বেশিরভাগ দিন ঝড় তুফানে খোলা মাঠে যথেষ্ট অসুবিধা সৃষ্টি করতো। দীর্ঘ ৫০ বছর পর যাতায়াতের সুবিধার জন্য বর্তমান বড়থল গ্রামে কিছু ভূমি খরিদ করে বাড়ী নির্মাণ করেন। মূলত মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের দীর্ঘ ৮০ বছরের জীবনে জাঁকজমকপূর্ণ কোনো অধ্যায় আসেনি যেহেতু পারিবারিক সাপোর্ট তথা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কখনও পাননি। কিন্তু শিক্ষকতাই ছিল একমাত্র ব্রত এবং এই শিক্ষকের ছাত্রছাত্রীরা এখন বড় বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ব্যবসায়ি, প্রসাশনিক কর্মকর্তা।
স্যারের যত কৃতিত্ব :
২০০৯ সালে সরকারি আদেশে সাবেক বৃহত্তর সিলেট জেলার ৩৫টি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ৩৫ জন ইংরেজির শিক্ষক সিলেটের টিটি কলেজে ইংরেজি ট্রেনিংয়ের আহ্বান করা হলে আজিম উদ্দিনও ছিদ্দিক আলি স্কুলের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রেনিং নেন। ট্রেনিং পিরিয়ডে শিক্ষকরা তাঁর কাছ থেকে কাছ থেকে অনেক কিছু জেনে নিতেন। তিনি অবাক হয়ে যেতেন যে ওরা কিভাবে স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। এমনকি সার্টিফিকেট নেয়ার দিন ও সিলেটের ডিসি স্যারসহ উপস্থিত থেকে ইংরেজিতে বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করলে মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন ছাড়া আর কেউ বক্তব্য দিতে পারেননি। এমনকি তদ্রুপভাবে ২০১১ সালে মৌলভীবাজারে ডিসি স্যারের কনফারেন্সে ৯৮ জন প্রফেসর ও শিক্ষকদের মধ্যে আজিম উদ্দিন ইংরেজিতে বক্তব্য দেন। আর কোন শিক্ষক দিতে পারেননি। তিনি যথেষ্ট সম্মান পেয়েছিলেন এবং জীবনের অনেক বড় অর্জনও ছিলো এটি।

স্যারের যত ছাত্র :
এলাকায় গত ২৫/৩০ বছর ধরে যত চেয়ারম্যান মেম্বার হচ্ছেন, তাদের ২/১ জন ছাড়া সবাই মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের শিক্ষার্থী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছাত্রছাত্রী অসংখ্য রয়েছে। মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডা. জামিল। যিনি আমেরিকার একজন বড় মাপের ফিজিশিয়ান। ডা. ইকবাল, সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশনের অন্যতম চিকিৎসক। ডা. বদরুল বর্তমানে বড়লেখা শহরে নিজস্ব ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন করে মানুষের সেবা করতেছেন। আমেরিকা থেকে ডিগ্রিও নিয়েছেন। জহির উদ্দিন, প্রিন্সিপাল ফুলতলা ডিগ্রি কলেজ। পিযুষ দাস, ম্যানেজার, জনতা ব্যাংক বড়লেখা শাখা। নিজাম উদ্দিন, ম্যানেজার সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লি. শ্রীমঙ্গল। তাছাড়া অসংখ্যজন ব্যাংক প্রধান রয়েছেন।
তাছাড়া অনেক ছাত্রছাত্রী ডাক্তার হচ্ছে, শিক্ষক হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতা হচ্ছে। সবার সাথে স্যারের যোগাযোগ নেই।

পারিবারিক : মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন তিন সন্তানের জনক। ১ম ছেলে মো. সুলতান বিন আজিম- জন্মগত বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। ২য় ছেলে মো. মনসুর বিন আজিম সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে ইংরেজি বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ওভারসীজ কান্ট্রি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার চেষ্টা করতেছেন। একমাত্র মেয়ে ইসমত আরা বিনতে আজিম-ছিদ্দেক আলি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ১ম ছাত্রী হিসেবে অধ্যায়নরত আছেন। সে ভাইবোনদের মধ্যে ৩য়।

গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে বড়লেখা উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সন্মাননা পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলা ১৪ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে সম্মাননা দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।
মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের দীর্ঘ ৮০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে সাদাসিধে ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না বিধায় অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ভালো কিছু করার সুতীব্র ইচ্ছে শক্তি ছিল বলেই এতোদূর এগোতে পেরেছেন। গুণী এই মানুষটি কর্মক্ষেত্রে যেমন সফল তেমনি পরিবার প্রধান হিসেবেও। জীবনের সর্বক্ষেত্রে উন্নত মানবিক গুনাবলী সমৃদ্ধ একজন মানুষ হিসেবে সকলের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছিলেন স্ব-মহিমায়। তাঁর হাতে গড়া অসংখ্য শিক্ষার্থী স্বদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃতিত্ব অর্জন করে চলেছেন। আমরা মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন স্যারের সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।