জলবায়ু ন্যায্যতা ও কৃষি, মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে হাওরে অবস্থান
- আপডেট সময় ০২:৫২:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৩২৬ বার পড়া হয়েছে
লাখাই প্রতিনিধিঃ হাওরে কলকারখানা স্থাপন এর কারণে জমির পরিমাণ কমছে, দূষিত হচ্ছে মাটি, পানি, বাতাস। এছাড়া হাওরের বুকচিরে যত্রতত্র সড়ক নির্মাণ করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে পরিবেশ- প্রতিবেশ ও প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে। কমছে হাওরের আয়তনসহ ফসল উৎপাদন। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছসহ জলজ প্রাণী। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। নদী- খাল -বিলে নিক্ষেপ করা অপরিশোধিত বর্জ্য মানুষ এর জীবন- জীবিকা’র উপর মারাত্মক আঘাত আনছে। অনেকে পেশা হারাচ্ছেন। চরম মানবিক সংকটে পড়েছেন হাওর কেন্দ্রিক জীবন -জীবিকা নির্বাহকারী মানুষজন।
জলবায়ু ন্যায্যতা ও কৃষি, মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে হাওরে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা একথা বলেন।
আজ ৯ ডিসেম্বর (শনিবার) বেলা ১১ টায় লাখাই উপজেলার বুল্লার হাওর সংলগ্ন সুতাং নদী তীরে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ,বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা, লাখাই প্রেসক্লাব ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে হাওরাঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্থ জেলে, কৃষক, মাঝিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি ও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, গবেষক অধ্যাপক জাহান আরা খাতুন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক এডভোকেট রুহুল হাসান শরীফ, লাখাই প্রেসক্লাব সভাপতি এডভোকেট আলী নেওয়াজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কলেজ শিক্ষক নাসরিন হক, এডভোকেট বিজন বিহারী দাস, ডা: আলী আহসান চৌধুরী, প্রতীক থিয়েটার সভাপতি ডা : সুনীল বিশ্বাস, বুল্লা বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক, জুনাইদ চৌধুরী, লাখাই প্রেসক্লাব এর সহ-সভাপতি আশীষ দাস গুপ্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল আহমেদ, মো: আতাউর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম, আহসানুল হক সুজা, আফরোজা সিদ্দিকা, সাংবাদিক আব্দুল হালিম, মো: সাইদুর রহমান, মো: বেলু মিয়া, মো: মহিউদ্দিন রিপন, সাইদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, মো : আবিদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, কৃষক কাছম আলী, আব্দুল কুদ্দুছ, মশিউর রহমান, জেলে মো: আহমেদ প্রমুখ।
মূল বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জের নির্বাহী সদস্য ও লাখাই প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক মো: বাহার উদ্দিন।
মাঝি মো: আহমেদ বলেন, হাওরের এই অঞ্চলে বর্ষাকালে বিভিন্ন স্থানে নৌকা দিয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করতাম আমরা। গত কয়েক বছর ধরে সুতাং নদীসহ হাওরের পানিতে খুব দুর্গন্ধ হয়। দূষণের জন্য নৌকা চালাতে কষ্ট হয়।
কৃষক কাছম আলী বলেন, বংশ-পরম্পরায় কৃষি কাজ আমাদের পেশা।দূষণ আমাদের মাটি খেয়ে ফেলেছে। ফসল লাগাই, কিন্তু ফলন হয় না।
একসময় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন মাছ সংগ্রহ করার জন্য ছুটে আসতো। হাজার হাজার জেলে পরিবার এর জীবন জীবিকা চলত হাওর ও সুতাং নদী থেকে মাছ ধরে। এখন আর সেই মাছ নেই! পেশা বদল করতে হচ্ছে আমাদের। বললেন জেলে আব্দুল কুদ্দুছ।
সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে কয়েক বছর ধরে হাওরে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। সময় মত বুরো ধানের বীজতলা তৈরি ও যথাসময়ে ধান চাষাবাদ ও রোপন করা যায় না। ফলে হাওরের কৃষি কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষককূল।
মূল বক্তব্যে খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সরকারি হিসেবে দেশে ৪২৩ টি হাওর রয়েছে। দেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন হয় হাওরাঞ্চল থেকে। হাওর এবং হাওরে প্রবাহিত অসংখ্য নদী যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দেশের গুরুত্বপূর্ন হাওরাঞ্চল এর প্রতি চলে অনাচার। হাওর, নদনদী, খাল – বিল, জলাশয় যেন কলকারখানার বর্জ্য ফেলার ঠিকানা!
যত্রতত্র সড়ক নির্মাণ করে হাওর বিনাশী উন্নয়ন মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেকারনে হাওরের প্রকৃতচিত্র উধাও হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু সংকটের বিরূপ প্রভাব পড়ছে হাওরে। শিল্পায়নের জন্য শ্রেণি পরিবর্তন করে হত্যা করা হচ্ছে হাওর ও এর জীববৈচিত্র্যকে।
বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা করে হাওরকে দূষণসহ সকল ধরনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে হবে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জীবনের জন্য।