জাতীয় চা দিবস ও শ্রীমঙ্গল – এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন
- আপডেট সময় ০৪:২৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ জুন ২০২৩
- / ৬১৮ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় চা দিবস ও শ্রীমঙ্গল
এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন
৪ ঠা জুন জাতীয় চা দিবস।এবারের চা দিবসের প্রতিপাদ্য “চা দিবসের সংকল্প-শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প”।জাতীয় চা দিবসের মূল অনুষ্ঠান শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হচ্ছে।জাতীয় চা দিবস নিয়ে লেখায় আমার মুগ্ধতা রয়েছে।কেননা সাত মাস চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল আমার কর্মক্ষেত্র ছিলো। শ্রীমঙ্গলের দুটি পাতা একটি কুড়িতে জমে আছে অনেক ভালোবাসার স্মৃতি। নবীন কবি,কলামিস্ট ও কল্পকার হিসেবে এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন এর যাত্রা এই চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল থেকেই।শ্রীমঙ্গল এর প্রায় সকল চা বাগানেই আমি গিয়েছি অপারেশনাল কার্যক্রম বা সাইক্লিংয়ের জন্য।সকাল-বিকাল সাইকেল নিয়ে চা বাগানের পথ ধরে গ্রান্ড সুলতানের রংধনু টি স্টল বা বিটিআরআই এর পথ ধরে কাকিয়াছড়া চা বাগানে চা খাওয়া ছিলো আমার প্রতিদিনের রুটিন।
২. যতদুর জানা যায় বাংলাদেশের চা বাগানের শ্রমিকরা ভারতের জলপাইগুড়ি, সাওতাল পরগনা,বিহার ও দক্ষিন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু থেকে এসেছে এবং বংশপরম্পরায় চা বাগানে কাজ করছে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর চা বাগানের শ্রমিকদের দেশে নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও চা শ্রমিকদের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।চা বাগান ও শ্রমিকদের প্রতি জাতির পিতার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সাল থেকে ৪ জুন কে জাতীয় চা দিবস হিসেবে পালন করছে।চা শ্রমিকরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভালোভাসার নিদর্শন হিসেবে নিজেরা চাদা দিয়ে তাকে সোনার চুরি উপহার দিয়েছেন। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে হাত উচিয়ে উপহারের সেই চুরি দেখিয়ে বলেন “আমার জীবনের সেরা উপহার”।সেই ভিডিও কনফারেন্সেই তিনি, চা শ্রমিকদের জন্য ঘড় নির্মাণ করার ঘোষণা দেন।এবং চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেন।ফলে সেই সময়ে তারা চলমান আন্দোলন বন্ধ করে হাসিমুখে চা বাগানে কাজে ফিরে যান।
৩. মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে চা বাগান জড়িয়ে আছে গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজারের বাংলোতে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।সেই বৈঠকেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশেকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।কালের পরিক্রমায় চা বাগানের ছেলেমেয়েরা এখন লেখাপড়া করছে।চা বাগানীরা সচ্ছল জীবনযাপন করছে।চা বাগানীর গর্বিত সন্তান সন্তোষ রবি দাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে।চা শ্রমিকরা এখন মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত হয়ে বৈচিত্র্যময় জীবনযাপন করছে।
৪. নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ বৃষ্টি কে ভালোভাসেন এবং তার প্রিয় ঋতু বরষা। তাই বিরহে এবং প্রেমে তিনি বৃষ্টির কাছেই আশ্রয় খুঁজেছেন,
যদি মন কাঁদে,
তুমি চলে এসো,চলে এসো,
এক বরষায়,
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে,
জল ভারা দৃষ্টিতে,
এসো কোমল শ্যামল ছায়,
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি,
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি,
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো,
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো,
তুমি চলে এসো,চলে এসো,
এক বরষায়…।
জুলাই থেকে প্রায় ৬ মাস শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়।শ্রীমঙ্গলের এই বৃষ্টি ও চা বাগানের দিনগুলো মনে পড়ে বারবার।প্রেম-বিরহ ও ভালোবাসার জন্য বৃষ্টিস্নাত শ্রীমঙ্গলের চা বাগানে যেতে হবে।পাহাড়ি টিলাময় সবুজেই রয়েছে মনের প্রশান্তি।
প্রিয় শহরে জাতীয় চা দিবস,
শুভকামনা নিরন্তর।
লেখক : সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ ক্যাম্প।