ঢাকা ০১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাকা উধাও হতাশা বাড়ছে ডিপিএস ও ফিক্স ডিপোজিটসহ অন্যান্য স্কিম গ্রাহকদের

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
  • / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ হতাশা বাড়ছে ডিপিএস ও ফিক্স ডিপোজিটসহ অন্যান্য স্কিমে লাভের আশায় টাকা জমা রাখা গ্রাহকদের। নিয়মিত লেদদেনকারী গ্রাহকরা চরম হতাশা নিয়ে বলছেন এতোদিন থেকে এমন আর্থিক সংকট থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো পথই বের করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। কেবল আশ্বাসেই গ্রাহকদের সময় ক্ষেপণ করছেন।

গ্রাহকরা বলছেন- আমরা এই শাখার কর্মকর্তাদের সার্বিক আচরণে মনে করছি এই ব্যাংক এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। আমাদের জমাকৃত টাকা কীভাবে আমাদের হাতে পাবো এমন দুশ্চিন্তায় এখন রাতদিন একাকার। মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার কবি আবদুল হামিদ মাহবুব মঙ্গলবার সকালের দিকে ওই ব্যাংকের নিজ একাউন্ট থেকে ৫৫ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য চেক নিয়ে গেলে তাকে টাকা না দিয়েই ফিরিয়ে দেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে জানান- ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তিনি ওই চেকের ছবি দিয়ে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখায় গিয়েছিলাম টাকা উঠাতে। ব্যাংক থেকে বললো ক্যাশ সংকট। টাকা দিতে পারবে না। জানতে চাইলাম কতদিন ধরে এই অবস্থা? উপস্থিত গ্রাহকরা জানলেন দুই মাস ধরে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন- আমাদের কিছুই করণীয় নেই। যত পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংকই আমাদের এই অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। তার ওই লেখাটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শতাধিক শেয়ার হয়। অর্ধশতাধিক কমেন্ট পড়ে। তাতে অনেকই এই ব্যাংকের দায়িত্বহীনতা ও দেউলিয়াত্ব নিয়ে নানা মন্তব্য লিখেন। মৌলভীবাজার শহরের ব্যস্ততম এলাকা চৌমোহনার কোর্ট রোড এলাকায় আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা। প্রতিদিন শতাধিক গ্রাহক টাকা উঠাতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। নিজের টাকা ব্যাংক থেকে উঠাতে না পারায় অনেককেই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

জানা যায় গেল ঈদের ছুটির দুইদিন পরও টাকার ঘাটতি থাকায় ব্যাংকের এই শাখাটি বন্ধ ছিল। গেল ৬ই মে টাকার অভাবে প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রাহকদের কিছু টাকা পাওয়া গেলে তালা খুলে অফিস কার্যক্রম শুরু হয়। এখনো ব্যাংকের অর্ধেক সাটার বন্ধ ও অর্ধেক খুলে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ রকম প্রায় দিনই বিভিন্ন সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে কার্যক্রম। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালমন্দও করছেন। বড় ধরনের ঝক্কি-ঝামেলারও শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে জেলা শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ক’জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন- টাকা না পাওয়া ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের গালিগালাজ শুনতে শুনতে আর সহ্য হচ্ছে না। টাকার সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকটি বন্ধ রাখলে ভালো হতো। তারা জানালেন এখন প্রতিদিনই নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সবল ও দুর্বল ব্যাংক এ রকম একটি ঘোষণার পর সবাই টাকা উত্তোলন করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। জমা না দিয়ে সবাই একসঙ্গে টাকা উত্তোলন করতে থাকায় এই সমস্যাটি প্রকট হয়। তবে যে একেবারেই লেনদেন হচ্ছে না তা এমন নয়। আমরা কমবেশি করে গ্রাহক সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের চলমান এই সমস্যার বিষয়টি হেড অফিস অবগত। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করছেন খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ফান্ড দেবেন। এই শাখায় গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৬-৭শ’ জন। তবে সংকট দ্রুত কাটবে বলে তিনি গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

টাকা উধাও হতাশা বাড়ছে ডিপিএস ও ফিক্স ডিপোজিটসহ অন্যান্য স্কিম গ্রাহকদের

আপডেট সময় ১১:১৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ হতাশা বাড়ছে ডিপিএস ও ফিক্স ডিপোজিটসহ অন্যান্য স্কিমে লাভের আশায় টাকা জমা রাখা গ্রাহকদের। নিয়মিত লেদদেনকারী গ্রাহকরা চরম হতাশা নিয়ে বলছেন এতোদিন থেকে এমন আর্থিক সংকট থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো পথই বের করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। কেবল আশ্বাসেই গ্রাহকদের সময় ক্ষেপণ করছেন।

গ্রাহকরা বলছেন- আমরা এই শাখার কর্মকর্তাদের সার্বিক আচরণে মনে করছি এই ব্যাংক এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। আমাদের জমাকৃত টাকা কীভাবে আমাদের হাতে পাবো এমন দুশ্চিন্তায় এখন রাতদিন একাকার। মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও ছড়াকার কবি আবদুল হামিদ মাহবুব মঙ্গলবার সকালের দিকে ওই ব্যাংকের নিজ একাউন্ট থেকে ৫৫ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য চেক নিয়ে গেলে তাকে টাকা না দিয়েই ফিরিয়ে দেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে জানান- ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তিনি ওই চেকের ছবি দিয়ে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখায় গিয়েছিলাম টাকা উঠাতে। ব্যাংক থেকে বললো ক্যাশ সংকট। টাকা দিতে পারবে না। জানতে চাইলাম কতদিন ধরে এই অবস্থা? উপস্থিত গ্রাহকরা জানলেন দুই মাস ধরে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন- আমাদের কিছুই করণীয় নেই। যত পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংকই আমাদের এই অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। তার ওই লেখাটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শতাধিক শেয়ার হয়। অর্ধশতাধিক কমেন্ট পড়ে। তাতে অনেকই এই ব্যাংকের দায়িত্বহীনতা ও দেউলিয়াত্ব নিয়ে নানা মন্তব্য লিখেন। মৌলভীবাজার শহরের ব্যস্ততম এলাকা চৌমোহনার কোর্ট রোড এলাকায় আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখা। প্রতিদিন শতাধিক গ্রাহক টাকা উঠাতে গিয়ে টাকা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। নিজের টাকা ব্যাংক থেকে উঠাতে না পারায় অনেককেই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

জানা যায় গেল ঈদের ছুটির দুইদিন পরও টাকার ঘাটতি থাকায় ব্যাংকের এই শাখাটি বন্ধ ছিল। গেল ৬ই মে টাকার অভাবে প্রায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রাহকদের কিছু টাকা পাওয়া গেলে তালা খুলে অফিস কার্যক্রম শুরু হয়। এখনো ব্যাংকের অর্ধেক সাটার বন্ধ ও অর্ধেক খুলে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ রকম প্রায় দিনই বিভিন্ন সময় বন্ধ রাখতে হয়েছে কার্যক্রম। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালমন্দও করছেন। বড় ধরনের ঝক্কি-ঝামেলারও শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে জেলা শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ক’জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন- টাকা না পাওয়া ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের গালিগালাজ শুনতে শুনতে আর সহ্য হচ্ছে না। টাকার সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকটি বন্ধ রাখলে ভালো হতো। তারা জানালেন এখন প্রতিদিনই নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মৌলভীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. তোফাজ্জল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সবল ও দুর্বল ব্যাংক এ রকম একটি ঘোষণার পর সবাই টাকা উত্তোলন করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। জমা না দিয়ে সবাই একসঙ্গে টাকা উত্তোলন করতে থাকায় এই সমস্যাটি প্রকট হয়। তবে যে একেবারেই লেনদেন হচ্ছে না তা এমন নয়। আমরা কমবেশি করে গ্রাহক সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের চলমান এই সমস্যার বিষয়টি হেড অফিস অবগত। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করছেন খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ফান্ড দেবেন। এই শাখায় গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ৬-৭শ’ জন। তবে সংকট দ্রুত কাটবে বলে তিনি গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেন।