ঢাকা ০৯:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
অনলাইনে টিকেটের আড়ালে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট চট্রগ্রামের ট্রেনের যাত্রীদের নানা দুর্ভোগ ফার্মগুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য: স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ মৌলভীবাজারে পূবালী ব্যাংকের বৃক্ষরোপণ,পণ্য প্রচারণা ও আলোচনা সভা ব্যর্থতার চাপ ও সমালোচনার মুখে সিলেট ছাড়লেন ডিসি মুরাদ শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় আ/ত্ম/হ/ত্যা আড়াই কোটি টাকার বিল বকেয়া ১২৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষড়যন্ত্রে বিএনপি দমবে না, অবাধ নির্বাচনে জনগণের বিজয় হবেই: ফয়জুল করিম ময়ূন মৌলভীবাজারে শিক্ষকদের মানববন্ধন মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কুলাউড়ায় বিশেষ অভিযানে ইয়াবাসহ দুই মা/দ/ক ব্যবসায়ী গ্রে/ফ/তা/র

ফার্মগুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য: স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৫৫ বার পড়া হয়েছে

বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফার্ম যেমন মাছের ফিশারী, গরুর খামার ও পোলট্রি ফার্মে যে খাদ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব ফার্মে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে গভীর উদ্বেগ। অসচেতনতা, লোভ ও তদারকির অভাবে অস্বাস্থ্যকর, ভেজাল কিংবা ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে প্রাণিদের খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে এসব প্রাণি খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগজীবাণু ও ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করছে, এবং মানুষের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষ করে ফিশারী ও পোলট্রি ফার্মে যেসব খাবার ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সময় মাছ ও মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল, অ্যান্টিবায়োটিক বা নিষিদ্ধ খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। ফলে সেই মাছ বা মুরগি যারা খান, তাদের দেহে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। এসব খাদ্য পূর্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহৃত হয়, যার পরিণতিতে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এসব খাবারের মধ্য দিয়ে বিষাক্ত ও অনিরাপদ উপাদান সহজেই মানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্ম দেয়।

গরুর খামারেও একই ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গাভীর দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অনেক খামার মালিক চিটা বা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন, যা দুধের স্বাভাবিক পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয় এবং দুধের স্বাদও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এর পাশাপাশি লাভের আশায় দুধে পানি মেশানো হচ্ছে, যা একধরনের প্রতারণা। এতে করে সাধারণ মানুষ দুধ থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছেন না, বরং নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন।

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের অপরিহার্যতা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফার্মগুলোতে ব্যবহৃত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা ও নিয়মিতভাবে সরকারি তদারকি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের উচিত প্রতিটি ফার্ম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা এবং প্রয়োজনীয় মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা। কারণ প্রাণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানবস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি। যদি খাদ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর উপাদান অব্যাহতভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে, তাহলে তা মানুষের জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

ফার্ম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকলের উচিত একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করা। শুধুমাত্র মুনাফার আশায় কেউ যেন মানুষের ক্ষতি না করে, সেদিকে সচেতন থাকা জরুরি। একজন ব্যবসায়ীর ন্যূনতম মানবিকতা থাকা উচিত, যেন নিজের লাভের জন্য অন্যের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে খেলা না করেন। মানুষকে নিরাপদ খাদ্য দেওয়া একটি সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহ আমাদের প্রতিটি কাজ দেখেন এবং বিচার করবেন। ব্যবসা করার সময় ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ও মানবিকতা বজায় রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক। খাদ্য আমাদের জীবনধারণের অন্যতম প্রধান উপাদান, সেটি যদি অনিরাপদ হয়, তবে তা ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজের জন্য এক চরম বিপদ।

ফলে, ফার্মগুলোতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, কার্যকর মনিটরিং ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এবং ব্যবসায় নৈতিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও দায়িত্বশীলতার চর্চা আমাদের একটি সুস্থ, সচেতন ও মানবিক সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। খাদ্যকে কেবল বাণিজ্যের পণ্য না ভেবে জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করাই সময়ের দাবি।
লেখক,,,
মাওলানা বশির আহমদ

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ফার্মগুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য: স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

আপডেট সময় ০৬:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফার্ম যেমন মাছের ফিশারী, গরুর খামার ও পোলট্রি ফার্মে যে খাদ্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব ফার্মে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে গভীর উদ্বেগ। অসচেতনতা, লোভ ও তদারকির অভাবে অস্বাস্থ্যকর, ভেজাল কিংবা ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে প্রাণিদের খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে এসব প্রাণি খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগজীবাণু ও ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশ করছে, এবং মানুষের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষ করে ফিশারী ও পোলট্রি ফার্মে যেসব খাবার ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সময় মাছ ও মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল, অ্যান্টিবায়োটিক বা নিষিদ্ধ খাদ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। ফলে সেই মাছ বা মুরগি যারা খান, তাদের দেহে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। এসব খাদ্য পূর্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহৃত হয়, যার পরিণতিতে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এসব খাবারের মধ্য দিয়ে বিষাক্ত ও অনিরাপদ উপাদান সহজেই মানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্ম দেয়।

গরুর খামারেও একই ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গাভীর দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অনেক খামার মালিক চিটা বা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করছেন, যা দুধের স্বাভাবিক পুষ্টিগুণ নষ্ট করে দেয় এবং দুধের স্বাদও অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এর পাশাপাশি লাভের আশায় দুধে পানি মেশানো হচ্ছে, যা একধরনের প্রতারণা। এতে করে সাধারণ মানুষ দুধ থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছেন না, বরং নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন।

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের অপরিহার্যতা অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফার্মগুলোতে ব্যবহৃত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা ও নিয়মিতভাবে সরকারি তদারকি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। প্রশাসনের উচিত প্রতিটি ফার্ম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা এবং প্রয়োজনীয় মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা। কারণ প্রাণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানবস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি। যদি খাদ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর উপাদান অব্যাহতভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে, তাহলে তা মানুষের জীবনের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

ফার্ম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকলের উচিত একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করা। শুধুমাত্র মুনাফার আশায় কেউ যেন মানুষের ক্ষতি না করে, সেদিকে সচেতন থাকা জরুরি। একজন ব্যবসায়ীর ন্যূনতম মানবিকতা থাকা উচিত, যেন নিজের লাভের জন্য অন্যের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে খেলা না করেন। মানুষকে নিরাপদ খাদ্য দেওয়া একটি সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহ আমাদের প্রতিটি কাজ দেখেন এবং বিচার করবেন। ব্যবসা করার সময় ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ও মানবিকতা বজায় রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক। খাদ্য আমাদের জীবনধারণের অন্যতম প্রধান উপাদান, সেটি যদি অনিরাপদ হয়, তবে তা ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজের জন্য এক চরম বিপদ।

ফলে, ফার্মগুলোতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, কার্যকর মনিটরিং ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এবং ব্যবসায় নৈতিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এই বিষয়ে প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও দায়িত্বশীলতার চর্চা আমাদের একটি সুস্থ, সচেতন ও মানবিক সমাজ গঠনে সহায়তা করবে। খাদ্যকে কেবল বাণিজ্যের পণ্য না ভেবে জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করাই সময়ের দাবি।
লেখক,,,
মাওলানা বশির আহমদ