বন্যামুক্ত রাখতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও পুরো মৌলভীবাজার জেলা এখনো বন্যার ঝুঁকিতে
- আপডেট সময় ০৪:১৯:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
- / ৮০৩ বার পড়া হয়েছে
মৌলভীবাজার ডেস্ক: পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জেলাকে বন্যামুক্ত রাখতে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েও পুরো জেলা এখনো বন্যার ঝুঁকিতে। মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার জন্য নেওয়া ওই প্রকল্পের কাজ চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৭ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রতিরক্ষা বাঁধে ঝুঁকিপূর্ণ ৬৭টি পয়েন্টের মধ্যে ২৭টি পয়েন্ট এখন পুরোপুরি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি বিএসএ’র বাধায় কুলাউড়ায় ৩টি পয়েন্টে কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ২০২৪ সালের জুনে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কতটুকু কাজ হবে এ নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী। ফলে জেলার বাসিন্দারা ভুগছেন বন্যা আতঙ্কে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে বন্যা ও নদীভাঙন মুক্ত রাখতে ২০২০ সালে ৯৯৯ কোটি টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর দুই পাড়ের ৬৭টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ৭২টি পয়েন্টে কাজের দরপত্র আহ্বান করে।
শুরু হয় বাঁধ নির্মাণ চরকাটিং। বিশেষ করে কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের রনচাপ, মন্দিরা দক্ষিণ বাড়ইগাঁও, মাতাবপুর, মনু বাজার, দাউদপুর, মিয়ারপাড়া, সাধনপুর কাউকাপন বাজার, টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া সন্দ্রাবাজ, চক সালন দুন্দালপুর, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ধলিয়া, আলীনগর, বেলেরতল, শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল, চাঁনপুর, ইটারঘট ও মানগাঁও, রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধুসহ বিভিন্ন পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এখন কাজের গতি কমে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুর এই ৪টি স্থানে ২ কিলোমিটার ২০০ মিটার অংশে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজ রয়েছে। এই ৪টি স্থানের বাংলাদেশ অংশে বাঁধে মোট ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩২টি সিসি ব্লক নির্মাণ, ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৭টি জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ এবং বাঁধ পুনর্বাসন কাজ রয়েছে। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ তৈরির কাজ সম্পন্ন করে রাখে। ৪টি স্থানের মধ্যে শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রামে বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির সহযোগিতায় পতাকা বৈঠকের পর মৌখিক সম্মতিতে কাজ চলমান থাকলেও গত বছরের ১৩ জানুয়ারি থেকে বিএসএফ এর বাধার কারণে নিশ্চিন্তপুর, তেলিবিল ও বাগজুর এলাকায় কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথমবার নদীতে জিও ব্যাগ ফেলতে চাইলে ভারতীয় বিএসএফ তাদের কাজে বাধা দেয়। এরপর আরও একাধিকবার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলত গেলে এতেও বাধার সম্মুখীন হয়। এতে করে টানা একবছর পাঁচ মাস ধরে নদীর ভাঙন রক্ষায় তীর সংরক্ষণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান বলেন, বিএসএফের বাধার মুখে আমার ইউনিয়নের তিনটি স্থানে প্রতিরক্ষা কাজ দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এই কাজ যথাসময়ে না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে চাতলাব্রিজ ও নিশ্চিন্তপুর এলাকা দিয়ে নদী ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। এতে শরীফপুর ইউনিয়নসহ হাজীপুর ইউনিয়ন, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়ন ও রাজনগরের কামারচক ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কাজের এই মন্থর গতির জন্য ৩টি কারণ চিহ্নিত করেছেন মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল। তিনি বলেন, ৩টি পয়েন্টে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় কাজ বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টি আছে। এ ছাড়াও জমি অধিগ্রহণের জটিলতা আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থান মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন অনেক ব্লক তৈরি করেছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ ও অর্থের অভাব এবং বিএসএফের বাধায় কাজ এগুতে পারছি না। বিএসএফের বাধায় আটকে থাকা ৪টি স্থানের কাজের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে বিজিবির সহযোগিতায় বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে মৌখিক সম্মতিতে দত্তগ্রাম স্থানের কাজ চলমান রয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ মার্চ যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ হতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন ভারতের নয়াদিল্লিতে একটি ডিওপত্র প্রদান করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই স্থানে স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য ভারত হতে কাজটি বাস্তবায়নের অনুমোদন প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, আমি এ জেলায় নতুন যোগ দিয়েছি। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।