ঢাকা ০৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশে খুন হওয়ার পর কাওছারের মৃতদেহ বড়লেখায়

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:১৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৬৪৬ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক:  উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাওছার হামিদ আলী (৩৫)। সেখান থেকে প্রায় সাত বছর পর আলী পাড়ি জমান ফ্রান্সে। এরমধ্যে কেটে গেছে প্রায় একযুগ। আলীর আর বাড়ি ফেরা হয়নি।

আলীর হয়তো স্বপ্ন ছিলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে হয়তো বিয়ে করে নতুন স্বপ্ন বুনবেন। বাবা-মাও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে হয়তো এমন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু কারোরই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না কোনোদিন। কারণ- আলীর প্রাণপ্রদীপ নিভে গেছে চিরতরে। সেই আলী ফিরছেন দেশে। তবে জীবিত নয়, কফিনবন্দি হয়ে।

খুন হওয়ার প্রায় দেড়মাস পর কাওছার হামিদ আলীর লাশ দেশে আসছে আগামী সোমবার (০৫ ডিসেম্বর)। ফ্রান্সে আইনী প্রক্রিয়া শেষে গতকাল শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) তার লাশ বিমানে দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওইদিন ফ্রান্সের অভারভিলা বাংলাদেশী জামে মসজিদে আলীর প্রথম জানাজা হয়েছে।

আলী মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে। গত ১৩ অক্টোবর আলী ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। শুরুতেই আলীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলেও দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে আলীকে হত্যায় জড়িতদের ধরতে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে প্রবাসী একটি সূত্র জানিয়েছে। আলীর স্বজন ও প্রবাসীরা আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।

আলীর বাবা আবুল হোসেন শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) রাত আটটায় মুঠোফোনে বলেন, আগামী সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) আমার ছেলের লাশ দেশে এসে পৌঁছাবে আসছে। গতকাল শুক্রবার ফ্রান্সে আইনী প্রক্রিয়া শেষে তার ছেলের লাশ দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে বলে তাকে ফ্রান্স প্রবাসীরা জানিয়েছেন। আলী কবে বিদেশ গিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ঢুকরে কেঁদে ওঠে বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে সে লেখাপড়ার জন্য লন্ডন যায়। সেখান থেকে প্রায় ৭ বছর পর ফ্রান্সে পাড়ি জমায়। প্রায় একযুগ কেটে গেছে। সে আর দেশে আসেনি। আশা ছিলো দেশে এলে তাকে বিয়ে দিবো। কিন্তু তাতো আর হবে না কোনোদিন।

ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ জানিয়েছেন, আইনী প্রক্রিয়া শেষে আলীর লাশ দেশে পাঠানো হয়েছে। সোমবার লাশ দেশে পৌঁছাবে। আলীর মৃত্যুরে ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে জন্য ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

প্রবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক প্রথমে কাওছার হামিদ আলীকে ঘাড়ে আঘাত করে। এরপর ঘাতকরা তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপরে ফেলে দেয়।  এতে আলী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৩ দিন তিনি কোমাতে ছিলেন। এরপর ১৩ অক্টোবর মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার।

পরিবারের অভিযোগ, আলীকে মারধর করে হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতেই ঘাতকরা দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে ফেসবুকে প্রচার করে।

গত ২১ অক্টোবর ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ মুঠোফোনে বলেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব শারহাদ শাকিল আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে ফ্রান্সের পুলিশ তাকে জানিয়েছে, কাওছার হামিদ আলী দুর্ঘটনায় মারা যায়নি; তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা আলীর নিজ এলাকা বড়লেখা ও কুলাউড়ার বলে তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছেন। তাদের নাম-পরিচয়ও তিনি জেনেছেন।

এদিকে আলীর মৃত্যুর খবরে দেশ-বিদেশে অনেকে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে স্ট্যাটাস শোয়ার করেন। তারাও আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বিদেশে খুন হওয়ার পর কাওছারের মৃতদেহ বড়লেখায়

আপডেট সময় ০৩:১৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক:  উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন কাওছার হামিদ আলী (৩৫)। সেখান থেকে প্রায় সাত বছর পর আলী পাড়ি জমান ফ্রান্সে। এরমধ্যে কেটে গেছে প্রায় একযুগ। আলীর আর বাড়ি ফেরা হয়নি।

আলীর হয়তো স্বপ্ন ছিলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে কোনো একদিন দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে হয়তো বিয়ে করে নতুন স্বপ্ন বুনবেন। বাবা-মাও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে হয়তো এমন স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু কারোরই স্বপ্ন আর পূরণ হবে না কোনোদিন। কারণ- আলীর প্রাণপ্রদীপ নিভে গেছে চিরতরে। সেই আলী ফিরছেন দেশে। তবে জীবিত নয়, কফিনবন্দি হয়ে।

খুন হওয়ার প্রায় দেড়মাস পর কাওছার হামিদ আলীর লাশ দেশে আসছে আগামী সোমবার (০৫ ডিসেম্বর)। ফ্রান্সে আইনী প্রক্রিয়া শেষে গতকাল শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) তার লাশ বিমানে দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ওইদিন ফ্রান্সের অভারভিলা বাংলাদেশী জামে মসজিদে আলীর প্রথম জানাজা হয়েছে।

আলী মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার পানিধার এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের ছেলে। গত ১৩ অক্টোবর আলী ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। শুরুতেই আলীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলেও দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে আলীকে হত্যায় জড়িতদের ধরতে ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে প্রবাসী একটি সূত্র জানিয়েছে। আলীর স্বজন ও প্রবাসীরা আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।

আলীর বাবা আবুল হোসেন শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) রাত আটটায় মুঠোফোনে বলেন, আগামী সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) আমার ছেলের লাশ দেশে এসে পৌঁছাবে আসছে। গতকাল শুক্রবার ফ্রান্সে আইনী প্রক্রিয়া শেষে তার ছেলের লাশ দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে বলে তাকে ফ্রান্স প্রবাসীরা জানিয়েছেন। আলী কবে বিদেশ গিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি ঢুকরে কেঁদে ওঠে বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে সে লেখাপড়ার জন্য লন্ডন যায়। সেখান থেকে প্রায় ৭ বছর পর ফ্রান্সে পাড়ি জমায়। প্রায় একযুগ কেটে গেছে। সে আর দেশে আসেনি। আশা ছিলো দেশে এলে তাকে বিয়ে দিবো। কিন্তু তাতো আর হবে না কোনোদিন।

ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ জানিয়েছেন, আইনী প্রক্রিয়া শেষে আলীর লাশ দেশে পাঠানো হয়েছে। সোমবার লাশ দেশে পৌঁছাবে। আলীর মৃত্যুরে ঘটনায় জড়িতরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে জন্য ফ্রান্সের পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

প্রবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে প্যারিসের মাখদরমি এলাকায় উবারের আইডি নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে কয়েকজন যুবক প্রথমে কাওছার হামিদ আলীকে ঘাড়ে আঘাত করে। এরপর ঘাতকরা তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপরে ফেলে দেয়।  এতে আলী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হামলাকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৩ দিন তিনি কোমাতে ছিলেন। এরপর ১৩ অক্টোবর মারা যান। ২০ অক্টোবর ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার।

পরিবারের অভিযোগ, আলীকে মারধর করে হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতেই ঘাতকরা দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে ফেসবুকে প্রচার করে।

গত ২১ অক্টোবর ফ্রান্সের সিনিয়র সাংবাদিক নূরুল ওয়াহিদ মুঠোফোনে বলেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সচিব শারহাদ শাকিল আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে ফ্রান্সের পুলিশ তাকে জানিয়েছে, কাওছার হামিদ আলী দুর্ঘটনায় মারা যায়নি; তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা আলীর নিজ এলাকা বড়লেখা ও কুলাউড়ার বলে তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছেন। তাদের নাম-পরিচয়ও তিনি জেনেছেন।

এদিকে আলীর মৃত্যুর খবরে দেশ-বিদেশে অনেকে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে স্ট্যাটাস শোয়ার করেন। তারাও আলীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।