ঢাকা ০৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

বৃষ্টি আর লবণ সংকটে চামড়া নষ্টের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুন ২০২৩
  • / ২৮৪ বার পড়া হয়েছে

বৃষ্টিতে ভিজে চামড়া পচে নষ্ট হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া রয়েছে লবণ সংকট আর লোডশেডিংয়ের ভয়।

তবে জেলা প্রশাসন বলছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় লোডশেডিং বন্ধ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনু নদীর পাশেই বালিকান্দি গ্রাম।২০০ বছর ধরে যে গ্রামের শতাধিক মানুষ চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে টিকে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন বাকিরা পেশা ছেড়েছেন।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা দাবি করেন, বছরের অন্য সময় চামড়ার দাম ভালো থাকলেও কোরবানির ঈদ আসলেই এক শ্রেণির অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা প্রক্রিয়াজাতকরণের উপকরণ লবণ সংকট সৃষ্টি করেন। এছাড়া ট্যানারি মালিকরা ঢাকার বাইরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িদের পাওনা টাকা না দিয়ে অসহযোগিতা করেন।

বালিকান্দি বাজারে গিয়ে কথা হলে চামড়া শ্রমিক মোজাম্মেল আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চামড়া সংগ্রহ চলছে, যদি বৃষ্টিতে ভিজে তাহলে সেই চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের আগেই পচে যাবে। আমরা কাজ শুরু করছি, বৃষ্টিও নামছে।

প্রবীণ চামড়া ব্যবসায়ী আজাদ মিয়া বলেন, লোকসান দিতে দিতে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। আমার ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঢাকা ট্যানারির লোকজন আত্মসাৎ করেছে। এখন আমি অনেকটা নিঃস্ব। আমাদের গ্রামে প্রায় ২০০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা চলে আসছে। প্রতিবছর কোরবানির সময় ঢাকার ট্যানারি সিন্ডিকেট আগের পাওনা পরিশোধ না করে ফুসলিয়ে চামড়া নিয়ে যায়। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ব্যবসায়ীরা সর্তক হয়েছেন। এখন নগদে ছাড়া চামড়ার চালান পাঠনো হয় না। এতে সিন্ডিকেট চক্র নানা ফন্দি করে। কখনো লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। আবার ফরিয়া সৃষ্টি করে তারা মফস্বল অঞ্চল থেকে চামড়া হাতিয়ে নেয়।

ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার বলেন, বালিকান্দির ব্যবসায়িরা ২০ থেকে ২৫ হাজার চামড়া সংগ্রহ করার টার্গেট নিয়েছেন। লবণের অভাবে জানি না কতটুকু হবে। ৫০ কেজি লবণের প্রতিবস্তা ৯০০ টাকা, ৭৫ কেজির বস্তা ১৩০০ টাকা। চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ লবণের প্রয়োজন হয়।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি পড়লেই চামড়ার পচন শুরু হয়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ১৫ বস্তা লবণ পাওয়া গেছে। ঈদের আগেরদিন থেকে মৌলভীবাজারে মূষলধারে বৃষ্টি নামছে। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা প্রতিবছরই আশায় বুক বেধে ব্যবসাতে নামি। পড়ে হতাশ হয়ে ফিরি। লোডশেডিং বন্ধ না হলেও অনেক ক্ষতি হবে।

চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বালিকান্দি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শওকত আলী বলেন, বালিকান্দি গ্রামে শত শত চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। বর্তমানে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচজন আছেন। চামড়ার সরকারি মূল্যে নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রক্রিয়াজাত করে ২০ থেকে ২৫ টাকা বর্গফুট বিক্রি করতে হয়। আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারিনি।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলছেন, চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার খুবই আন্তরিক। যে কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় লোডশেডিং বন্ধ রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বৃষ্টি আর লবণ সংকটে চামড়া নষ্টের শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

আপডেট সময় ০২:৫৪:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুন ২০২৩

বৃষ্টিতে ভিজে চামড়া পচে নষ্ট হওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া রয়েছে লবণ সংকট আর লোডশেডিংয়ের ভয়।

তবে জেলা প্রশাসন বলছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় লোডশেডিং বন্ধ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনু নদীর পাশেই বালিকান্দি গ্রাম।২০০ বছর ধরে যে গ্রামের শতাধিক মানুষ চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে টিকে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন বাকিরা পেশা ছেড়েছেন।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা দাবি করেন, বছরের অন্য সময় চামড়ার দাম ভালো থাকলেও কোরবানির ঈদ আসলেই এক শ্রেণির অসাধু চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা প্রক্রিয়াজাতকরণের উপকরণ লবণ সংকট সৃষ্টি করেন। এছাড়া ট্যানারি মালিকরা ঢাকার বাইরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িদের পাওনা টাকা না দিয়ে অসহযোগিতা করেন।

বালিকান্দি বাজারে গিয়ে কথা হলে চামড়া শ্রমিক মোজাম্মেল আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চামড়া সংগ্রহ চলছে, যদি বৃষ্টিতে ভিজে তাহলে সেই চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের আগেই পচে যাবে। আমরা কাজ শুরু করছি, বৃষ্টিও নামছে।

প্রবীণ চামড়া ব্যবসায়ী আজাদ মিয়া বলেন, লোকসান দিতে দিতে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। আমার ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঢাকা ট্যানারির লোকজন আত্মসাৎ করেছে। এখন আমি অনেকটা নিঃস্ব। আমাদের গ্রামে প্রায় ২০০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা চলে আসছে। প্রতিবছর কোরবানির সময় ঢাকার ট্যানারি সিন্ডিকেট আগের পাওনা পরিশোধ না করে ফুসলিয়ে চামড়া নিয়ে যায়। এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ব্যবসায়ীরা সর্তক হয়েছেন। এখন নগদে ছাড়া চামড়ার চালান পাঠনো হয় না। এতে সিন্ডিকেট চক্র নানা ফন্দি করে। কখনো লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। আবার ফরিয়া সৃষ্টি করে তারা মফস্বল অঞ্চল থেকে চামড়া হাতিয়ে নেয়।

ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার বলেন, বালিকান্দির ব্যবসায়িরা ২০ থেকে ২৫ হাজার চামড়া সংগ্রহ করার টার্গেট নিয়েছেন। লবণের অভাবে জানি না কতটুকু হবে। ৫০ কেজি লবণের প্রতিবস্তা ৯০০ টাকা, ৭৫ কেজির বস্তা ১৩০০ টাকা। চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ লবণের প্রয়োজন হয়।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি পড়লেই চামড়ার পচন শুরু হয়। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ১৫ বস্তা লবণ পাওয়া গেছে। ঈদের আগেরদিন থেকে মৌলভীবাজারে মূষলধারে বৃষ্টি নামছে। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা প্রতিবছরই আশায় বুক বেধে ব্যবসাতে নামি। পড়ে হতাশ হয়ে ফিরি। লোডশেডিং বন্ধ না হলেও অনেক ক্ষতি হবে।

চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বালিকান্দি চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শওকত আলী বলেন, বালিকান্দি গ্রামে শত শত চামড়া ব্যবসায়ী ছিলেন। বর্তমানে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচজন আছেন। চামড়ার সরকারি মূল্যে নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রক্রিয়াজাত করে ২০ থেকে ২৫ টাকা বর্গফুট বিক্রি করতে হয়। আমরা ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারিনি।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলছেন, চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার খুবই আন্তরিক। যে কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় লবণ সরবরাহ করা হয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় লোডশেডিং বন্ধ রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।