বেতন ফিরে পেতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা
- আপডেট সময় ১১:৪৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
- / ৫০৬ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার নয়াগ্রাম শিমুলতলা দাখিল মাদ্রাসার আয়া তকমিনা বেগম। মাদ্রাসা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আয়াকে দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর কোর্টে মামলা করান সভাপতি ও সুপার। পরে এ মামলা প্রত্যাহার করায় আয়ার বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
বেতন ভাতা ফিরে পাওয়ার দাবীতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্বামী সন্তান নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই ) সকালে এ অবস্থান কর্মসূচিতে আয়া, প্রতিবন্ধী স্বামী মহীউদ্দীন, দুই শিশু সন্তান রাবেয়া আক্তার (৮), জুনায়েদ আহমদ (৫) নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম সুষ্ঠ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
জানা যায়, নয়াগ্রাম শিমুলতলা দাখিল মাদ্রাসার আয়া তকলিনা বেগম ঐ মাদ্রাসায় নিয়োগ পান ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর। মাদ্রাসার কিছু জমি নিয়ে স্থানীয় একজনের সাথে মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির দ্বন্দ চলছিল। দ্বন্দের এক পর্যায়ে সুপার ও সভাপতি তকমিনাকে বেতন সংক্রান্ত কাজ আছে বলে মৌলভীবাজার আদালতে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকটি কাগজে তকমিনার স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে একই গ্রামের মঈনুল ইসলাম মনু মাষ্টারের ছেলে জুমন মিয়ার নামে নারী নির্যাতন মামলা করান। পরে তিনি জানতে পারেন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে দিয়ে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে। পরবর্তীতে সুপার ও সভাপতির সাথে এই মামলার বিরুদ্ধে কথা বলায় এবং মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করায় ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বেতন বন্ধের বিষয়টি সুরাহার জন্য আয়া তকমিনা বেগম মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবেদনে এসব অভিযোগ করেন।
আরও জানা যায়, বেতন ভাতা বন্ধ হওয়ায় বিগত পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী ও ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করেছেন তিনি।
বেতন ভাতা ফিরে পেতে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদনের পর তকমিনা বেগম সংবাদ সম্মেলনসহ জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এতকিছুর পরও বেতন ভাতা ফিরে না পেয়ে তিনি মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় আয়া তকমিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, নয়াগ্রাম শিমুলতলা দাখিল মাদ্রাসার আয়া পদে কয়েকমাস আগে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাদ্রাসার কিছু জমি নিয়ে স্থানীয় একজনের সাথে মাদ্রাসার সুপার জিয়াউল হক ও সভাপতি মনিরুল ইসলামের দ্বন্দ চলছিল। দ্বন্দের এক পর্যায়ে সুপার ও সভাপতি তাকে বেতন সংক্রান্ত কাজ আছে বলে মৌলভীবাজার আদালতে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকটি কাগজে তকলিমার স্বাক্ষর নেন। স্বাক্ষর নেওয়ার পর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে একই গ্রামের মঈনুল ইসলাম মনু মাষ্টারের ছেলে জুমন মিয়ার নামে নারী নির্যাতন মামলা করান।
পরে তিনি জানতে পারেন জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাকে দিয়ে নারী নির্যাতনের মামলা করানো হয়েছে। পরবর্তীতে সুপার ও সভাপতির সাথে তকলিমা মামলার বিরুদ্ধে কথা বলায় এবং মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করায় তার বেতন বন্ধ করে দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তকলিনা আরও জানান, বেতন ভাতা বন্ধ হওয়ায় বিগত পবিত্র ঈদুল ফিতর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী স্বামী ও ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে মানবেতার জীবন যাপনসহ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তার। তিনি বেতন ভাতা ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
তকমিনার স্বামী মহিউদ্দিন জানান, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। কোন আয় রোজগার করতে পারি না। স্ত্রীর বেতন ভাতা বন্ধ হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতার জীবনযাপন করছি।
অবস্থান কর্মসূচিতে তকলিমার দুই শিশু সন্তান বলেন, ঘরে ভাত নাই, মার চাকুরী নাই, কোথা থেকে খাব। মায়ের চাকুরীটা ফিরে পেলে আমরা খেয়ে পড়ে বাঁচাতে পারব।
এদিকে ওই নারী নির্যাতন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জুড়ী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতি: দায়িত্ব) শাহেদা আকতার সম্প্রতি আয়াকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানোর সত্যতা পাওয়ায় মাদ্রাসার সভাপতি মনিরুল ইসলামসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা করেছেন।