ঢাকা ০৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের উদ্যাগে পুলিশ লাইনে উপস্থাপিত হচ্ছে টেরাকোটায় মুক্তিযুদ্ধ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:১৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৪৮৭ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে যে আন্দোলন ও সংগ্রামগুলো রূপ নিয়েছিল সেগুলোকে নীরব প্রতীকী অভিব্যক্তিতে স্মরণ ও প্রকাশ করার জন্য মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে উপস্থাপিত হচ্ছে টেরাকোটায় মুক্তিযুদ্ধ।

 

একটি টেরাকোটার ফ্রেমে তুলে ধরা হচ্ছে মহান স্বাধীনতার দৃশ্যপট। আছে পরাধীনতার শেকল থেকে বাঙালির মুক্তির স্বাদ। আস্বাদনের সংগ্রামী পথের নিশানা। প্রতিফলিত হচ্ছে স্বপ্ন, বেদনা ও গৌরব। জাগ্রত করছে চেতনাবোধ। টেরাকোটা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাস।

 

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্মিত টেরাকোটার দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। কোনোটা বড় আকারের মুখোশ, কোনোটা নারীর গড়ন। মধ্যখানে বড় পরিসরে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজদীপ্ত তর্জনী।

 

এছাড়া বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে যোদ্ধারা। এক প্রান্তে ৮ডিসেম্বর ৭১ এর শীতের সকালে একটি নতুন উদীয়মান সূর্যের উন্মোচন করতে সকালের কুয়াশা উঠেছিল। দীর্ঘ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন এবং স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত নয় মাসের লড়াইয়ের মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত দিবসে বিজয় উল্লাসের স্মৃতিপট।

শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় টেরাকোটার ফ্রেমে নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে স্থাপনাটি এক অনন্য নিদর্শন। এছাড়াও টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ১৯৫২র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনসহ পরবর্তী ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ৭০ এর নির্বাচন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চা বাগানে গণহত্যা। অদম্য সাহসী যোদ্ধা সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি শহীদ হামিদুর রহমানের অসম সাহসীকতার সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ যে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতার প্রথম দিকে রাজারবাগ থেকে শুরু মহাকাব্যগুলি এই স্মরণীয় টেরাকোটার কাঠামোতে অনুরণিত হয়েছে।

শিল্পী আহসান আহমেদ টেরাকোটার কাজটি করছেন। অসাধারণ কাজের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের বিবর্তন ও পরিবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো।

পুলিশ লাইনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ লাইনের মূল ফটকের উত্তর দিকে সবুজ ও সতেজতায় ল্যান্ডস্কেপে কংক্রিটের সেটে লম্বাকৃতির একটি সংমিশ্রণ, পোড়ামাটির ম্যুরাল এবং কংক্রিটের গ্রাফিক্যাল ভাস্কর্যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও সর্বস্বত্যাগী সংগ্রামী মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের তেজোদীপ্ত ভাষণের কারুকার্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ দেশমাতৃকার বীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সময়ের সুচারু অবয়ব। এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাইফেল হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া বিপ্লবী ভঙ্গিমা।

ধারাবাহিকভাবে ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের দৃশ্যপট। দূর থেকে দেখলে মনে হয় খোলা আকাশের নিচে বীর সৈনিক বিজয়ীর বেশে নির্ভীক প্রহরীর মতো স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।

পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান (পিপিএম বার) বলেন, পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো কাজটি সম্পন্ন হবে। এরপর এটি উদ্বোধন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এমন স্থাপত্যের মাধ্যমে শুধু পুলিশ সদস্যরা নয়, দর্শনার্থীরাও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং পূর্ববর্তী ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে পারবে। বুকে ধারণ করবে দেশপ্রেমের প্রতিজ্ঞা।

 

এ শিল্পকর্মটি দেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় কৌতূহলি সাধারণ মানুষ আর দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই আছে।

 

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের উদ্যাগে পুলিশ লাইনে উপস্থাপিত হচ্ছে টেরাকোটায় মুক্তিযুদ্ধ

আপডেট সময় ০৪:১৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে যে আন্দোলন ও সংগ্রামগুলো রূপ নিয়েছিল সেগুলোকে নীরব প্রতীকী অভিব্যক্তিতে স্মরণ ও প্রকাশ করার জন্য মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে উপস্থাপিত হচ্ছে টেরাকোটায় মুক্তিযুদ্ধ।

 

একটি টেরাকোটার ফ্রেমে তুলে ধরা হচ্ছে মহান স্বাধীনতার দৃশ্যপট। আছে পরাধীনতার শেকল থেকে বাঙালির মুক্তির স্বাদ। আস্বাদনের সংগ্রামী পথের নিশানা। প্রতিফলিত হচ্ছে স্বপ্ন, বেদনা ও গৌরব। জাগ্রত করছে চেতনাবোধ। টেরাকোটা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইতিহাস।

 

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্মিত টেরাকোটার দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। কোনোটা বড় আকারের মুখোশ, কোনোটা নারীর গড়ন। মধ্যখানে বড় পরিসরে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজদীপ্ত তর্জনী।

 

এছাড়া বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে যোদ্ধারা। এক প্রান্তে ৮ডিসেম্বর ৭১ এর শীতের সকালে একটি নতুন উদীয়মান সূর্যের উন্মোচন করতে সকালের কুয়াশা উঠেছিল। দীর্ঘ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন এবং স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত নয় মাসের লড়াইয়ের মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত দিবসে বিজয় উল্লাসের স্মৃতিপট।

শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় টেরাকোটার ফ্রেমে নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে স্থাপনাটি এক অনন্য নিদর্শন। এছাড়াও টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ১৯৫২র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনসহ পরবর্তী ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ৭০ এর নির্বাচন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চা বাগানে গণহত্যা। অদম্য সাহসী যোদ্ধা সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি শহীদ হামিদুর রহমানের অসম সাহসীকতার সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ যে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতার প্রথম দিকে রাজারবাগ থেকে শুরু মহাকাব্যগুলি এই স্মরণীয় টেরাকোটার কাঠামোতে অনুরণিত হয়েছে।

শিল্পী আহসান আহমেদ টেরাকোটার কাজটি করছেন। অসাধারণ কাজের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের বিবর্তন ও পরিবর্তনের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো।

পুলিশ লাইনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ লাইনের মূল ফটকের উত্তর দিকে সবুজ ও সতেজতায় ল্যান্ডস্কেপে কংক্রিটের সেটে লম্বাকৃতির একটি সংমিশ্রণ, পোড়ামাটির ম্যুরাল এবং কংক্রিটের গ্রাফিক্যাল ভাস্কর্যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও সর্বস্বত্যাগী সংগ্রামী মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের তেজোদীপ্ত ভাষণের কারুকার্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ দেশমাতৃকার বীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সময়ের সুচারু অবয়ব। এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাইফেল হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া বিপ্লবী ভঙ্গিমা।

ধারাবাহিকভাবে ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের দৃশ্যপট। দূর থেকে দেখলে মনে হয় খোলা আকাশের নিচে বীর সৈনিক বিজয়ীর বেশে নির্ভীক প্রহরীর মতো স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।

পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান (পিপিএম বার) বলেন, পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো কাজটি সম্পন্ন হবে। এরপর এটি উদ্বোধন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এমন স্থাপত্যের মাধ্যমে শুধু পুলিশ সদস্যরা নয়, দর্শনার্থীরাও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং পূর্ববর্তী ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে পারবে। বুকে ধারণ করবে দেশপ্রেমের প্রতিজ্ঞা।

 

এ শিল্পকর্মটি দেখতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় কৌতূহলি সাধারণ মানুষ আর দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই আছে।