ঢাকা ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

লাউয়াছড়ায় হরিণ জবাই করতে ট্রেন থামালেন চালক!

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:৩২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৭১৬ বার পড়া হয়েছে

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, “গায়ে আঘাতের দাগ থাকলেও এর কারণে হরিণটির মৃত্যু হয়নি।

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি মায়া হরিণের জবাই করা দেহ ঢাকাগামী কালনি ট্রেন থেকে গত বুধবার (২২ তারিখ) উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশ। চলন্ত ট্রেনে কিভাবে হরিণের মৃতদেহ আসলো- এ নিয়ে দুদিনের অনুসন্ধানের পর জানগেছে, কালনি ট্রেনের চালক লাউয়াছড়া বনের ভেতর ট্রেন থামিয়ে হরিণটি জবাই করেন।

মৃত হরিণটির গায়ে আঘাতের চিহ্নও পান তারা।

গত দুই দিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালনি ট্রেনের চালক কোনো অনুমতি ছাড়াই লাউয়াছড়া বনের ভেতর ৬ মিনিট ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে রাখেন। এসময় হরিণটি হত্যা করেন তিনি।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ট্রেনের একাধিক যাত্রী।

এই ট্রেনের যাত্রীরা জানান, “লাউয়াছড়া ঢোকার কিছুক্ষণ পর দেখি ট্রেন থেমে গেছে। শুনি যে একটা হরিণের জন্য ট্রেন থেমেছে। কেউ বলছে শিকারীরা হরিণকে আক্রমণ করায় হরিণটি দৌড় দিয়ে গাড়ির সামনে পড়েছে। আবার কেউ বলছিল যে বন বিভাগের লোকজন সাথে আছে।

পরে দেখলাম একটা হরিণ আহত হয়েছে বলে একে জবাই করা হয়েছে। আমি মৃত অবস্থায় হরিণটিকে দেখেছি। অনেকেই এ ঘটনা ভিডিও করেছে। হরিণটি আনার পর ট্রেন ছেড়ে দেয়,” যোগ করেন তিনি।

সে ঘটনার কয়েকটি ছবি এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। ছবিতে দেখা গেছে এক ব্যাক্তির হাতে জবাই করার অস্ত্র। তবে তিনি চালক নিজেই কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, সেদিন ট্রেনটি স্টেশনে দেরি করে পৌঁছায়। ভানুগাছ রেওলয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার তার রেকর্ড বুক থেকে জানান, ভানুগাছ থেকে ৮.২৮ এ ট্রেনটি ছেড়ে আসে এবং ৮.৫৪ তে  শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌঁছায়। অন্যান্যসময় ২০ মিনিট লাগলেও এই দিন লাগে ২৬ মিনিট।

এদিকে বনবিভাগ সুত্রেও জানা যায়, ট্রেনের গায়ে লেগে হরিনটি আহত হওয়ায় সেটিকে জবাই করে ট্রেনে তোলা হয়।

বনবিভাগের একাদিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের শতভাগ ধারণা যে চালক ট্রেন থামিয়েছেন এবং জবাই করে তা ট্রেনে তুলেছেন। কারণ ট্রেন না থামালে তা কোনভাবেই ট্রেনে তোলা সম্ভব নয়। এই মায়া হরিণ লাউয়াছড়া বনেই সাধারণত দেখা যায় এবং অতিতেও ট্রেনের ধাক্কায় হরিণ আহত বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কর্ণ চন্দ্র মল্লিক বলেন, “আমরা পোস্ট মর্টেম করে বুঝতে পেরেছি প্রাণীটিকে ধারলো কোন জিনিস দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।”

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, “গায়ে আঘাতের দাগ থাকলেও এর কারণে হরিণটির মৃত্যু হয়নি। জবাই না করলে এই আঘাতে সে সুস্থ হয়ে যেত।”

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, “আমার ধারণা ট্রেনের আঘাতে আহত হওয়ার পর তা ট্রেনে তোলা হয়। কিভাবে তোলা হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।”

কালনি ট্রেনের সেই চালকের সাথে কথা বলার জন্য একাধিক বার শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি চালক মোবাইল নাম্বার দিতে পারেন নি।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

লাউয়াছড়ায় হরিণ জবাই করতে ট্রেন থামালেন চালক!

আপডেট সময় ১০:৩২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, “গায়ে আঘাতের দাগ থাকলেও এর কারণে হরিণটির মৃত্যু হয়নি।

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একটি মায়া হরিণের জবাই করা দেহ ঢাকাগামী কালনি ট্রেন থেকে গত বুধবার (২২ তারিখ) উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে পুলিশ। চলন্ত ট্রেনে কিভাবে হরিণের মৃতদেহ আসলো- এ নিয়ে দুদিনের অনুসন্ধানের পর জানগেছে, কালনি ট্রেনের চালক লাউয়াছড়া বনের ভেতর ট্রেন থামিয়ে হরিণটি জবাই করেন।

মৃত হরিণটির গায়ে আঘাতের চিহ্নও পান তারা।

গত দুই দিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালনি ট্রেনের চালক কোনো অনুমতি ছাড়াই লাউয়াছড়া বনের ভেতর ৬ মিনিট ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে রাখেন। এসময় হরিণটি হত্যা করেন তিনি।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ট্রেনের একাধিক যাত্রী।

এই ট্রেনের যাত্রীরা জানান, “লাউয়াছড়া ঢোকার কিছুক্ষণ পর দেখি ট্রেন থেমে গেছে। শুনি যে একটা হরিণের জন্য ট্রেন থেমেছে। কেউ বলছে শিকারীরা হরিণকে আক্রমণ করায় হরিণটি দৌড় দিয়ে গাড়ির সামনে পড়েছে। আবার কেউ বলছিল যে বন বিভাগের লোকজন সাথে আছে।

পরে দেখলাম একটা হরিণ আহত হয়েছে বলে একে জবাই করা হয়েছে। আমি মৃত অবস্থায় হরিণটিকে দেখেছি। অনেকেই এ ঘটনা ভিডিও করেছে। হরিণটি আনার পর ট্রেন ছেড়ে দেয়,” যোগ করেন তিনি।

সে ঘটনার কয়েকটি ছবি এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। ছবিতে দেখা গেছে এক ব্যাক্তির হাতে জবাই করার অস্ত্র। তবে তিনি চালক নিজেই কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, সেদিন ট্রেনটি স্টেশনে দেরি করে পৌঁছায়। ভানুগাছ রেওলয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার তার রেকর্ড বুক থেকে জানান, ভানুগাছ থেকে ৮.২৮ এ ট্রেনটি ছেড়ে আসে এবং ৮.৫৪ তে  শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌঁছায়। অন্যান্যসময় ২০ মিনিট লাগলেও এই দিন লাগে ২৬ মিনিট।

এদিকে বনবিভাগ সুত্রেও জানা যায়, ট্রেনের গায়ে লেগে হরিনটি আহত হওয়ায় সেটিকে জবাই করে ট্রেনে তোলা হয়।

বনবিভাগের একাদিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের শতভাগ ধারণা যে চালক ট্রেন থামিয়েছেন এবং জবাই করে তা ট্রেনে তুলেছেন। কারণ ট্রেন না থামালে তা কোনভাবেই ট্রেনে তোলা সম্ভব নয়। এই মায়া হরিণ লাউয়াছড়া বনেই সাধারণত দেখা যায় এবং অতিতেও ট্রেনের ধাক্কায় হরিণ আহত বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কর্ণ চন্দ্র মল্লিক বলেন, “আমরা পোস্ট মর্টেম করে বুঝতে পেরেছি প্রাণীটিকে ধারলো কোন জিনিস দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।”

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, “গায়ে আঘাতের দাগ থাকলেও এর কারণে হরিণটির মৃত্যু হয়নি। জবাই না করলে এই আঘাতে সে সুস্থ হয়ে যেত।”

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, “আমার ধারণা ট্রেনের আঘাতে আহত হওয়ার পর তা ট্রেনে তোলা হয়। কিভাবে তোলা হয়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।”

কালনি ট্রেনের সেই চালকের সাথে কথা বলার জন্য একাধিক বার শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি চালক মোবাইল নাম্বার দিতে পারেন নি।