ঢাকা ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লেবুর দেশে লেবুর দাম আকাশচুম্বি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪০:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৮৯ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ

ভোজন রসিকদের কাছে লেবু একটি অপরিহার্য খাবার। আর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লেবুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলা লেবু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু গত কয়েকদিনে লেবুর দাম প্রতিপিসে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা করে। ফলে এখন লেবু বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ দামে। লেবুচাষি ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে তারা বলছেন, রোজা উপলক্ষে এই খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়েনি। বাজারে সরবরাহ না থাকায় লেবুর দাম বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জেলার বিভিন্ন লেবুর আড়ত ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেবুর দাম আকাশচুম্বি। যে লেবু আগে প্রতিপিস ২ থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হতো, এখন সেটা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১৫ টাকায়। খুচরা বাজারে মানভেদে এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দামে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় প্রচুর লেবু উৎপাদিত হয়। তখন দামও থাকে কম। শুকনো মৌসুমে লেবুর উৎপাদন প্রাকৃতিক কারণেই কমে যায়। যারা গাছের বাড়তি যত্ন করেন, তাদের বাগানে সব সময় লেবু থাকে। তবে সেটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে রোজায় লেবুর চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে।

শ্রীমঙ্গল এলাকার লেবুচাষি বিল্লাল মিয়া জানান, ৮শ পিস লেবু বিক্রি করেছেন ৮ হাজার ৬শত টাকায়। যেখানে একপিস লেবুর দাম পড়েছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। সপ্তাহখানেক আগে সমপরিমাণ লেবু বিক্রি করেছেন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

আরেক লেবুচাষি সামছুল ইসলাম বলেন, মাঘ মাস থেকেই লেবুর দাম বৃদ্ধির দিকে। এখন গাছে লেবু খুবই কম। খুব কষ্ট করে গাছে লেবু টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। এতে করে লেবুর দাম কিছুটা বেড়েছে। বৈশাখ মাস থেকে লেবুর সরবরাহ বাড়বে তখন দাম কমে যাবে বলেও জানান তিনি।

৪ হাজার পিস লেবু কিনেছেন পাইকারি লেবুর ক্রেতা মো. জিয়া। তিনি বলেন, গাড়িভাড়াসহ একটা লেবুর দাম পড়বে ১২ টাকার মতো। এখন লেবুর উৎপাদন কম থাকায় বাজারে লেবুর পরিমাণ কম। তবে দাম বেশি। পাশাপাশি পাইকারও বেশি।

লেবু ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, রোজার আগে থেকেই লেবুর সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে বর্তমানে লেবুর সরবরাহ কম। ফলে এই খাদ্যপণ্যটির দাম আকার ভেদে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোজাকে সামনে রেখে লেবুর দাম বাড়েনি।

মৌলভীবাজার শহরের আড়ত থেকে ১৩ টাকা দরে প্রতিপিস লেবু কিনে খুচরা ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান টিসি মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা রুহেল মিয়া।

স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতা ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, রমজান মাসে নানা ধরনের নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেবুর দামও। রোজার শুরুতে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিপিস লেবু ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রোজার আগে এই লেবুর প্রতিপিস দাম ছিল ৩ থেকে ৫ টাকা।

ক্রেতা আমীর মিয়া বলেন, এখন অনেক লেবুতে রস ভালোভাবে আসেনি। এরপরও রোজা উপলক্ষে এসব লেবু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ক্রেতা ফয়েজ রহমান জানান, ইফতারির সময় লেবুর শরবত পান করতে তিনি এক হালি লেবু কিনেছেন ৬০ টাকা দিয়ে। আবার এসব লেবুর রসও কম। অথচ কিছুদিন আগে একই সাইজের লেবু ২৫ টাকা হালিতে কিনেছিলেন। তাই লেবুর শরবতের স্বাদ খাবার স্যালাইনের সঙ্গে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি দিয়ে মেটানো হবে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এখন লেবুর মৌসুম না। বর্তমানে যে লেবু পাওয়া যাচ্ছে, তাতে রস কম। চাহিদার চেয়ে জোগান কম, এ জন্য দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলেই একমাসের মধ্যে লেবু পরিপক্ব হবে। জোগান বেড়ে যাবে, দামও কমবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

লেবুর দেশে লেবুর দাম আকাশচুম্বি

আপডেট সময় ০৯:৪০:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্কঃ

ভোজন রসিকদের কাছে লেবু একটি অপরিহার্য খাবার। আর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লেবুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার বিভিন্ন পাহাড়ি টিলা লেবু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু গত কয়েকদিনে লেবুর দাম প্রতিপিসে বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা করে। ফলে এখন লেবু বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ দামে। লেবুচাষি ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে তারা বলছেন, রোজা উপলক্ষে এই খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়েনি। বাজারে সরবরাহ না থাকায় লেবুর দাম বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জেলার বিভিন্ন লেবুর আড়ত ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেবুর দাম আকাশচুম্বি। যে লেবু আগে প্রতিপিস ২ থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হতো, এখন সেটা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১৫ টাকায়। খুচরা বাজারে মানভেদে এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দামে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় প্রচুর লেবু উৎপাদিত হয়। তখন দামও থাকে কম। শুকনো মৌসুমে লেবুর উৎপাদন প্রাকৃতিক কারণেই কমে যায়। যারা গাছের বাড়তি যত্ন করেন, তাদের বাগানে সব সময় লেবু থাকে। তবে সেটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে রোজায় লেবুর চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে।

শ্রীমঙ্গল এলাকার লেবুচাষি বিল্লাল মিয়া জানান, ৮শ পিস লেবু বিক্রি করেছেন ৮ হাজার ৬শত টাকায়। যেখানে একপিস লেবুর দাম পড়েছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। সপ্তাহখানেক আগে সমপরিমাণ লেবু বিক্রি করেছেন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়।

আরেক লেবুচাষি সামছুল ইসলাম বলেন, মাঘ মাস থেকেই লেবুর দাম বৃদ্ধির দিকে। এখন গাছে লেবু খুবই কম। খুব কষ্ট করে গাছে লেবু টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। এতে করে লেবুর দাম কিছুটা বেড়েছে। বৈশাখ মাস থেকে লেবুর সরবরাহ বাড়বে তখন দাম কমে যাবে বলেও জানান তিনি।

৪ হাজার পিস লেবু কিনেছেন পাইকারি লেবুর ক্রেতা মো. জিয়া। তিনি বলেন, গাড়িভাড়াসহ একটা লেবুর দাম পড়বে ১২ টাকার মতো। এখন লেবুর উৎপাদন কম থাকায় বাজারে লেবুর পরিমাণ কম। তবে দাম বেশি। পাশাপাশি পাইকারও বেশি।

লেবু ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, রোজার আগে থেকেই লেবুর সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে বর্তমানে লেবুর সরবরাহ কম। ফলে এই খাদ্যপণ্যটির দাম আকার ভেদে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোজাকে সামনে রেখে লেবুর দাম বাড়েনি।

মৌলভীবাজার শহরের আড়ত থেকে ১৩ টাকা দরে প্রতিপিস লেবু কিনে খুচরা ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান টিসি মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা রুহেল মিয়া।

স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতা ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, রমজান মাসে নানা ধরনের নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেবুর দামও। রোজার শুরুতে খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতিপিস লেবু ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রোজার আগে এই লেবুর প্রতিপিস দাম ছিল ৩ থেকে ৫ টাকা।

ক্রেতা আমীর মিয়া বলেন, এখন অনেক লেবুতে রস ভালোভাবে আসেনি। এরপরও রোজা উপলক্ষে এসব লেবু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ক্রেতা ফয়েজ রহমান জানান, ইফতারির সময় লেবুর শরবত পান করতে তিনি এক হালি লেবু কিনেছেন ৬০ টাকা দিয়ে। আবার এসব লেবুর রসও কম। অথচ কিছুদিন আগে একই সাইজের লেবু ২৫ টাকা হালিতে কিনেছিলেন। তাই লেবুর শরবতের স্বাদ খাবার স্যালাইনের সঙ্গে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি দিয়ে মেটানো হবে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এখন লেবুর মৌসুম না। বর্তমানে যে লেবু পাওয়া যাচ্ছে, তাতে রস কম। চাহিদার চেয়ে জোগান কম, এ জন্য দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলেই একমাসের মধ্যে লেবু পরিপক্ব হবে। জোগান বেড়ে যাবে, দামও কমবে।