শ্রীমঙ্গলে টমটম নিয়ন্ত্রণ করায় স্বস্তি ফিরেছে সড়কে
- আপডেট সময় ০৩:৩৬:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
- / ২৪৫ বার পড়া হয়েছে
এম এ রকিবঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের চৌমূহনা কেন্দ্রীক মূল সড়কে ব্যাটারী চালিত টমটম চলাচলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করায় দীর্ঘদিন পর স্বস্তি ফিরেছে সড়কে। এর ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন।
স্থানীয়রা জানান, শহরের যানজট নিরসনের লক্ষে স্থানীয় সাংবাদিক, সুশিলসমাজ ও সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দাবী জানানো হয়েছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য। এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে পথচারীরা যাতে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারেন সেজন্য টমটম নিয়ন্ত্রণ করার জোড়ালো দাবী জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবার সকাল থেকে থানা পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ, এসিল্যান্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে একযোগে মাঠে নামেন। শহরের কেন্দ্রবিন্দু চৌমূহনা ও এর আশপাশে টমটম চলাচলে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখলদারমুক্ত করার জন্য। তার আগে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করে বেশকিছু দিক নির্দেশা দেয়া হয়।
দৈনিক কালের কন্ঠ ও বাংলা ট্রিবিউনের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম মৌলভীবাজার ২৪ ডট কমকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে টমটম চলাচলে নির্দেশনা প্রদান করায় শহর যানজটমুক্ত হয়েছে। এসব বাহন নিয়ন্ত্রণ করার দাবী দীর্ঘদিনের। আমাদের আরো কিছু দাবী রয়েছে। সেগুলো দ্রুত কার্যকর করতে হবে। বিশেষ করে শহরের হবিগঞ্জ সড়কের কয়েকটি বাস কাউন্টারগুলো দ্রুত সরাতে হবে শহর স্থায়ী যানজটমুক্ত রাখতে হলে। এছাড়া অবৈধ গাড়ি পার্কিংসহ ফুটপাত অবমুক্ত রাখতে প্রশাসনের তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, গত বুধবার থেকে শহরের মূল সড়কগুলো যানজটমুক্ত হয়েছে। সেটা যেন অব্যাহত থাকে সেই প্রত্যাশা রাখি প্রশাসনের কাছে। তবে এই পরিবেশ অব্যাহত রাখতে হলে শহরের ভিতর কয়েকটি বাস কাউন্টার রয়েছে যেমন শ্যামলী, হানিফ, এনাসহ লোকাল বাসগুলোর কাউন্টার শহরের বাহিরে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোকে চৌমূহনার আশপাশ থেকে সরিয়ে স্থায়ীভাবে দূরে নিয়ে গেলে শহর পুরোপুরি যানজটমুক্ত থাকবে বলে আমার বিশ^াস। তিনি আরো বলেন, আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করে শহরের সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা আমাদের কথা মনে রাখে।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম মৌলভীবাজার ২৪ ডট কমকে বলেন, শহরের চৌমূহনা কেন্দ্রীক যানজট নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, মূল সড়ক দখল করে ভেনে ভাসমান হকারের উৎপাত, ফুটপাত দখলমুক্তসহ ব্যাটারী চালিত টমটম যাতে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে চলাচল করে সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পথচারীসহ সাধারন মানুষের মধ্যে স্বস্থি ফিরিয়ে আনতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা বদ্ধ পরিকর।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মোবারক বলেন, শহরে যানজটমুক্ত রাখতে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের কাজ করছে। গত বুধবার থেকে ট্রাফিক পুলিশ, সেনাবাহিনী, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনসহ থানা পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় শহর যানজটমুক্ত হয়েছে। শহরে আসা সাধারন মানুষ যাতে নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারে সেজন্য আমাদের এ কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে। শহর সব সময়’ই যানজটমুক্ত থাকবে, আপনাদের সহায়তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাব বলে তিনি যোগ করেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ আবু তালেব বলেন, মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে শ্রীমঙ্গল হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটা উপজেলা। পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানে সারা দেশের মানুষ বছরজুড়েই ভ্রমনে আসেন। শহর কেন্দ্রীক যানজট দীর্ঘদিনের একটা সমষ্যা। আমরা পরিবহন শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষদের সাথে সভা করে তাদের মতামত নিয়েছি, কিভাবে শহরকে যানজটমুক্ত করা যায় সে ব্যাপারে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি।
তিনি বলেন, সকলের আন্তরিক সহযোগিতা থাকলে এবং নিয়ম মেনে চললে শহর যানজটমুক্ত রাখতে পারব। জনস্বার্থের এই কাজে কেউ যদি নিয়ম এবং শৃঙ্খলা না মেনে চলার চেষ্টা করে তাহলে আমরা গাড়ি জব্দ করাসহ তাদের বিরোদ্ধে আরো কঠোর হবো। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার জন্য প্রতিটি রোডে চলাচলের জন্য টমটমের আলাদা আলাদা সিরিয়াল নাম্বার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সকল টমটমের ডাটাবেজ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সকল টমটমের তথ্য উপজেলা এবং থানায় থাকবে। এক এলাকার টমটম যাতে অন্য এলাকায় চালাতে না পারে এরকম একটা নিয়ম করে দিব। এছাড়া শহরের স্টেশন রোডের পেট্রোল পাম্প, মৌলভীবাজার রোডের চন্দ্রনাথ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হবিগঞ্জ রোডের আখড়া মার্কেট এবং কলেজ রোডের মাষ্টারপাড়া এলাকার পথ পর্যন্ত টমটম চলচলা করবে। টমটম যাতে এই নির্দেশনার বাহিরে চৌমূহনার দিকে না যায় সে ব্যাপারে সচেতন করার পাশাপাশি নিয়ম মেনে চলার অনুরুধ করব। প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের সেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। তাছাড়া শহরে মাইকিং করিয়েছি যাতে কেউ যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং না করেন। এছাড়া ফুটপাত থাকবে শুধু পথচারীদের চলাচলের জন্য। এখানে কেউ দখল করার চেষ্টা করলে অথবা বিধিনিষেধ অমান্য করলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এছাড়া শহর থেকে সিএনজি স্ট্যান্ড এবং বাস কাউন্টারগুলো পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।