সেই দিন বেশি দূরে নয়…মৌলভীবাজারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: জাহিদ
- আপডেট সময় ০১:১৯:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৬২৯ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধিঃ বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন,‘দেশের মানুষ একের পর এক সব জিনিসপত্রের দাম বৃদ্দির কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। সরকারের অত্যাচার,জুলুম,নির্যাতনে মানুষ আজ জেগে উঠেছে। মানুষ এ সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য বাস ট্রাক সকল যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ার পরেও আমাদের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ বিএনপির প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশে তাদের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করেছে তারা আর এ অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
দেশের মানুষ তারা তাদের ভোটে সরকার নির্বাচিত করতে চায়। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। তারা দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি আর সহ্য করতে পারছে না। ঘুম থেকে উঠে দেখে লিটার প্রতি ১২/১৪ টাকা তেলের দাম বেশি। কেজি প্রতি ১০/১২ টাকা চিনির দাম বেশি। যেন এটা মগের মুল্লুক। হীরক রাজোর দেশের চেয়েও খারাপ।
তিনি বলেন-এখন আবার জ্বালানী তেল এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন থেকে ক্ষমতা কেড়ে সরকার নিজেই নিয়ে নিয়েছে। যখন যা দরকার তখন দাম বাড়াতে পারে। অর্থাৎ লুটপাটের একটা সীমা থাকা উচিত। এবং বিজ্ঞজনেরা বলছেন ১০ লক্ষ কোটি তারা দেশের বাইরে পাচার করেছে। একজন কৃষক ব্যাংক থেকে ৫/৬ হাজার টাকা লোন নিতে ৬মাস থেকে ১ বছর ব্যাংকে ঘুরতে হয়।
আর তারা(আওয়ামীলীগ) ত্রিশ দিন লাগে নাই। ৯০০ কোটি টাকা যে ছেলে লোন নিয়েছে। তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ওই কোম্পানী বয়স এখনও ত্রিশ দিন হয়নি। লুটপাট এমন একটি পর্যায়ে গেছে সাধারণ মানুষের টাকা এখন তাদের নিজের পকেটের টাকা মনে করছে। কাজেই দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়। দেশের অর্থনীতিকে যদি রক্ষা করতে হয়। দেশের মানুকে যদি বাঁচাতে হয়। সর্বোপরি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রকৃত গনতন্ত্র যদি ফিরিয়ে দিতে হয়, তাহলে এই ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের বিদায় এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া কোন গতন্ত্যর নাই। যার জন্যই সাধারণ মানুষ পলোগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে কুমিল্লার টাউন হল ময়দান পর্যন্ত যে আটটি গনসমাবেশ হয়েছে এবং আগামীকাল হবে রাজশাহীতে আর ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর হবে ১০ নাম্বার গনসমাবেশ। অর্থাৎ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতির মাধ্যমেই আজকে প্রমাণিত বিএনপির যে দাবী এটি গনমানুষের দাবী। যার জন্যই এটি বিএনপির জনসভা নয়। এটি বিএনপির গনসমাবেশ। অর্থাৎ বিএনপির এবং সাধারণ মানুষ আজকে একাকার একই দাবীতে রাস্তায় নেমেছে। এ অবস্থার মধ্যে মানুষ আন্দোলন সংগ্রামে মানুষের কথা বলতে যেয়ে রক্ত যখন দেয়া শিখেছে বাঙ্গালী কোন আন্দালনে পরাজিত হয় নাই। ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় কোন আন্দোলনে যখন রক্ত ঝরে সে আন্দোলন বৃথা যায় না। সে আন্দোলনে জয় যুক্ত হয় জনগন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের বেঙ্গল কনভেনশন হলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন,বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন।
সভা সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিছবাউর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন,শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র জেলা বিএনপি নেতা মো.মহসীন মিয়া মধু,সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী,হেলু মিয়া,এমএ মুকিত,মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক,আশিক মোশাররফ,ফয়সল আহমেদ,জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য মোশারফ হোসেন বাদশা,জেলা আইনজীবি ফোরামের সভাপতি জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশীদ,জেলা কৃষক দলের আহবায়ক ও জেলা বিএনপির সহ সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ,জেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল,জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি স্বাগত কিশোর দাশ,শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রসিক, জেলা ওলামা দলের আহবায়ক ও জেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হেকিম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, কমলগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া শফি,শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরে আলম সিদ্দীকি,কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক বিএনপি নেতা মেয়র কামাল আহমেদ জুনেদ,রাজনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.জিতু মিয়া,বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ প্রমূখ। এছাড়াও এ বিশেষ সভায় জেলাবিএনপির উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবি বীরমুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সুনীল কুমার দাশ সম্প্রতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অতিথিরা ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন আরও বলেন,আজকে জনগনের সাথে পুলিশ প্রশাসন আইন আদালত কে মুখোমুখি করা হচ্ছে। সেই দিন বেশি দূরে নয় যেদিন এই প্রশাসন এই পুলিশ এই আইন আদালত জনগনের পাশে আসবে। আজকে যারা শাসকদল আওয়ামীলীগ এক ঘরে হয়ে যাবেন। এখনও সময় আছে সেইফ এক্সজিট খুঁজেন। নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার দিন। জাতীয় নির্বাচন দিন। দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন। তাহলেই কেবল রক্ষা অন্যথায় দেশের সাধারণ মানুষ গনআন্দোলনের মূখে ভেসে যাবেন।
তিনি দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি সকল বিভেদভুলে যাওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন,আগামীতে দেশে গনতন্ত্র ও জনগনের ভোটাধিকার আদায়, নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার পুন:প্রতিষ্ঠা,দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবীতে এই অবৈধ সরকার বিদায়ের একদফার আন্দোলন দ্বিতীয় দফায় ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে শুরু হবে। কেন্দ্র ঘোষিত এসব এই আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের পতন তরান্বিত করতে হবে। তিনি বলেন-আজকে খালেদা জিয়া জেলখানায়। পৌণে পাঁচটা বছর হয়ে গেল। এই ফেব্রুয়ারী মাসের ৮ তারিখ আসলে পাঁচ বছর হবে। একটা মানুষ সারাদিন বসে থাকে। মা পারে না ছেলের কাছে যেতে। ছেলেও পারে না মায়ের কাছে আসতে। এ মুহুর্তেও তিনি বন্দী জীবন যাপন করছেন। যদিও সরকার বলে যে উনি মুক্ত। কিন্তু এমন মুক্ত যে উনি এভার কেয়ার হাসপাতাল আর বাসা। এর বাইরে আর কোথাও যেতে পারেন না। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে তো দূরের কথা এর বাইরে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে আছেন। চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন । আর এখন উনার পাসপোর্টও ফেরত দেয়া হচ্ছেনা নবায়নও করা হচ্ছেনা এবং মিথ্যামামলা সাজিয়ে সাজা দিয়ে এ অবৈধ সরকার দেশে ফিরে আসার পথরুদ্ধ করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন,সাংগঠনিকভাবে বিএনপি এখন নতুন অধ্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ বিএনপি এখন তার তৃণমুলের নেতৃবৃন্দ পছন্দের নেতাদেরকে নির্বাচিত করবে। বিএনপি আর পূর্বের সেই যে অবস্থান ছিল নয়াপল্টন থেকে অথবা কোন অফিস থেকে কমিটি দেবে। সেখান থেকে সরে এসেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব সাংগঠনিকবিষয়াদি সরাসরি দেখভাল করছেন। এরকমভাবে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হবে। দলের নেতৃত্ব দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচিত করবে। কিন্তু নেতত্ব¡ নির্বাচনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যে মানুষগুলো রাজপথে আছে,নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেয়। আন্দোলন সংগ্রামে যাদের পাওয়া যায় তাদের স্থান দিতে হবে। যে নেতা রাজ পথে থকে নেতৃত্ব দিবে এবং দলকে সামনে আর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ডা: জাহিদ আরও বলেন,‘মরহুম অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান কিন্তু দ্বিতীয়টা আমাদের কাছে আর আসছে না। দীর্ঘকাল যিনি বাজেট দিয়েছেন। উনারমতো বিরল প্রাজ্ঞ অর্থমন্ত্রী একজনও নেই। অর্থনীতি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য কতটুকু শক্ত হতে হয়,তা তিনি দেখিয়েছেন। কখনও কখনও দলীয় অনেক কিছুর উর্ধ্বে উঠে ঠিক নেতার কথামতো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বক্তব্য ছিল ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে দেশে বড়। একইভাবে উনার সহকর্মী এম সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতির শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য যে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেক সময় সর্বোচ্চআসীন প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদের অনেক সদস্যরাও উনার কথায় শেষে পর্যন্ত সায় দিতে হয়েছে। দেশের জন্য। দেশের মানুষের জন্য। কল্যাণের জন্য। আজকেরমতো এইরকম লুটেরা অর্থনীতি বা রাজনীতি বা দেশকে একদম দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাওয়ার যে একটি চরম পর্যায় বর্তমান সরকার যে দেখাচ্ছে বা দেখিয়েছে বা আগামীদিনের যে সংকট সামনে আসছে সেইটি মোকাবেলা করার মতো কেউ নেই। আজকে অর্থমন্ত্রীকে চোখেও দেখা যায় না। পত্রপত্রিকা লিখে উনি কোথায়?। অর্থাৎ যে মানুষটি আজ অর্থনীতির বিশৃঙ্খলারসময় সংকটের সময় সবচেয়ে বেশী জোরালো বক্তব্য রাখার কথা উনি আজকে চুপচাপ’।
তিনি বলেন,দেশের তলাহীনঝুড়ি যখন ছিল। সেই তলাহীন ঝুড়ি থেকেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৮০ সনের মধ্যেই চাল দেশ থেকে রপ্তানী করেছিলেন। এবং আমরা যখন দুর্ভিক্ষের জন্য লঙ্গরখানায় থালা নিয়ে যেতাম ৭৪ সনে। যাদের বয়স একটু বেশী আছে তাদের মনে থাকার কথা। সেই মানুষগুলি চাল রপ্তানী করলো ৭৯ সনে। অর্থাৎ নেতৃত্বের যদি দূরদর্শীতা থাকে নেতৃত্বের যদি সততা থাকে নেতৃত্বের যদি ভিশন থাকে দেশ প্রেমের মধ্যে যদি কোনখাদ না থাকে তাহলেই সম্ভব।