ঢাকা ০৪:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মৌলভীবাজারের ফাতেমা শিশু হৃদরোগ সার্জারির পথ প্রদর্শক

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৫০:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
  • / ৫৯৬ বার পড়া হয়েছে
মোঃ কাওছার ইকবাল: স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডঃ নুরুন নাহার ফাতেমা, যিনি বাংলাদেশে প্রথম শিশু হৃদরোগ সার্জারির পথ প্রদর্শক হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা নবজাতক শিশুর হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক সম্পর্কিত রোগ বিশেষজ্ঞ।
মৌলভীবাজার জেলার কৃতি সন্তান ডঃ নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম, যিনি স্বাধীনতা পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৯ এ হয়েছেন(বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার)। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করেন ড. নাহার। ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ব্যক্তিগত কৃতিত্বের জন্য এ ধরনের সর্বোচ্চ সম্মাননা দেশে প্রথমবার তিনিই পেলেন। ডা. ফাতেমাকে বাংলাদেশের ‘মাদার অব পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট’ বলা হয়। তিনি সফলতার সঙ্গে ৭ হাজারেরও অধিক হৃদরোগ শিশুর চিকিৎসা করেছেন।
ডা. নাহার স্বপ্ন দেখেন, শিশুদের জন্য একটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে দরিদ্র পরিবারের রোগীরা বিনামূল্যে পেতে পারেন চিকিৎসা। ডঃ নাহার, যিনি বাংলাদেশে গত ৩২ বছর ধরে শিশুদের জন্য CHD চিকিৎসার পথপ্রদর্শক। নবজাতক শিশুর হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক সম্পর্কিত রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা। ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বলেন, সরকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেস (NICVD) এর মতো শিশুদের জন্য একটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারে, যেহেতু সারা দেশে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। .
এ পেশা শুরুর পর বিদেশের মাটিতে প্রশিক্ষণরত থাকার সময় কঠিন এক মুহূর্ত পাড় করেছেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকাসহ বহুদিন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে বেঁচে যাওয়ার পর পণ করেছিলেন, চিকিৎসাসেবায় ফিরে পাওয়া জীবন বিলিয়ে দেবেন জনসেবায়। বিনামূল্যে শিশুদের চিকিৎসা করবেন। ডা. ফাতেমা শিশু চিকিৎসার আরেক প্রতিকৃত অধ্যাপক ডা. এমআর খানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ’। তার মা-বাবার নামে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ওয়াদুদ-ময়মুন্নেছা ফাউন্ডেশন’। যে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসাসেবাসহ ওষুধ দিয়ে আসছেন তিনি।
ঢাকার সম্মিলিত মেডিকেল হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান ডাঃ নাহার, সিএমএইচ দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে অন্তত ২৫ জন জন্মগত হৃদরোগ (সিএইচডি) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর। দেশে প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ৫৪ শিশুমৃত্যুর হার জন্মগত হৃদরোগে শিশুর মৃত্যুর কারণেও অনেক বেশি হয। তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি এবং এটাও বিশ্বাস করি যে সরকার শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত কার্ডিওভাসকুলার রোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবে।
ডাঃ নাহার জানান, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা গ্রামে তার ওয়াদুদ ময়মুন্নেছা ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন রয়েছে। ডাঃ নাহার ১৯৮৫ সালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং তারপর এফসিপিএস, এফআরসিপি এবং এফএসিসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ডাঃ নাহারের স্বামীও সিএমএইচের একজন ডাক্তার এবং এখন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। তিনি সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান কার্ডিয়াক সেন্টারে তার প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি শিশু কার্ডিয়াক বিভাগে রেজিস্ট্রার হিসাবে বিদেশী হাসপাতালেও কাজ করেছিলেন।
ডা. ফাতেমার স্বপ্ন অনেক বড়। দেশের মাটিতে শিশুদের চিকিৎসায় একটি বিশেষায়িত জাতীয় কার্ডিয়াক হাসপাতাল তৈরি করতে চান। যেখানে এসব রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। যেখানে অসচ্ছল মা-বাবার সন্তানরা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবে। তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মার্জিয়া তাবাসসুম ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে লন্ডনে সফল একজন ব্যাংকার হিসেবে চাকরি করছেন। ছোট মেয়ে মাশিয়া মাইশা আহমদ। মেডিসিনের ওপর ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মৌলভীবাজারের ফাতেমা শিশু হৃদরোগ সার্জারির পথ প্রদর্শক

আপডেট সময় ১২:৫০:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
মোঃ কাওছার ইকবাল: স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডঃ নুরুন নাহার ফাতেমা, যিনি বাংলাদেশে প্রথম শিশু হৃদরোগ সার্জারির পথ প্রদর্শক হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা নবজাতক শিশুর হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক সম্পর্কিত রোগ বিশেষজ্ঞ।
মৌলভীবাজার জেলার কৃতি সন্তান ডঃ নুরুন নাহার ফাতেমা বেগম, যিনি স্বাধীনতা পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৯ এ হয়েছেন(বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার)। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করেন ড. নাহার। ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ব্যক্তিগত কৃতিত্বের জন্য এ ধরনের সর্বোচ্চ সম্মাননা দেশে প্রথমবার তিনিই পেলেন। ডা. ফাতেমাকে বাংলাদেশের ‘মাদার অব পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট’ বলা হয়। তিনি সফলতার সঙ্গে ৭ হাজারেরও অধিক হৃদরোগ শিশুর চিকিৎসা করেছেন।
ডা. নাহার স্বপ্ন দেখেন, শিশুদের জন্য একটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে দরিদ্র পরিবারের রোগীরা বিনামূল্যে পেতে পারেন চিকিৎসা। ডঃ নাহার, যিনি বাংলাদেশে গত ৩২ বছর ধরে শিশুদের জন্য CHD চিকিৎসার পথপ্রদর্শক। নবজাতক শিশুর হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড এবং রক্তবাহক সম্পর্কিত রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা। ডা. নুরুন নাহার ফাতেমা বলেন, সরকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেস (NICVD) এর মতো শিশুদের জন্য একটি কার্ডিওভাসকুলার রোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারে, যেহেতু সারা দেশে কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। .
এ পেশা শুরুর পর বিদেশের মাটিতে প্রশিক্ষণরত থাকার সময় কঠিন এক মুহূর্ত পাড় করেছেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকাসহ বহুদিন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে বেঁচে যাওয়ার পর পণ করেছিলেন, চিকিৎসাসেবায় ফিরে পাওয়া জীবন বিলিয়ে দেবেন জনসেবায়। বিনামূল্যে শিশুদের চিকিৎসা করবেন। ডা. ফাতেমা শিশু চিকিৎসার আরেক প্রতিকৃত অধ্যাপক ডা. এমআর খানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন ‘চাইল্ড হার্ট ট্রাস্ট বাংলাদেশ’। তার মা-বাবার নামে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ওয়াদুদ-ময়মুন্নেছা ফাউন্ডেশন’। যে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসাসেবাসহ ওষুধ দিয়ে আসছেন তিনি।
ঢাকার সম্মিলিত মেডিকেল হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান ডাঃ নাহার, সিএমএইচ দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে অন্তত ২৫ জন জন্মগত হৃদরোগ (সিএইচডি) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশে প্রতি বছর। দেশে প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ৫৪ শিশুমৃত্যুর হার জন্মগত হৃদরোগে শিশুর মৃত্যুর কারণেও অনেক বেশি হয। তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি এবং এটাও বিশ্বাস করি যে সরকার শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত কার্ডিওভাসকুলার রোগ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবে।
ডাঃ নাহার জানান, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা গ্রামে তার ওয়াদুদ ময়মুন্নেছা ফাউন্ডেশন নামে একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন রয়েছে। ডাঃ নাহার ১৯৮৫ সালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং তারপর এফসিপিএস, এফআরসিপি এবং এফএসিসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ডাঃ নাহারের স্বামীও সিএমএইচের একজন ডাক্তার এবং এখন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। তিনি সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান কার্ডিয়াক সেন্টারে তার প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি শিশু কার্ডিয়াক বিভাগে রেজিস্ট্রার হিসাবে বিদেশী হাসপাতালেও কাজ করেছিলেন।
ডা. ফাতেমার স্বপ্ন অনেক বড়। দেশের মাটিতে শিশুদের চিকিৎসায় একটি বিশেষায়িত জাতীয় কার্ডিয়াক হাসপাতাল তৈরি করতে চান। যেখানে এসব রোগীর যথাযথ চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। যেখানে অসচ্ছল মা-বাবার সন্তানরা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবে। তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মার্জিয়া তাবাসসুম ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে লন্ডনে সফল একজন ব্যাংকার হিসেবে চাকরি করছেন। ছোট মেয়ে মাশিয়া মাইশা আহমদ। মেডিসিনের ওপর ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন।