ঢাকা ১০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১ বছর ৫ মাস ৯ দিন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৬১৬ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক ফেসবুক পেইজে উনার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো

আসসালামু আলাইকুম

সম্মানিত মৌলভীবাজারবাসী,

মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা যে হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.)এর পবিত্রভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দানের জন্য। অশেষ কৃতজ্ঞতা এই জেলার সকল সম্মানিত জনগণ এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মেধাবী এবং চৌকস  সহকর্মীদের  প্রতি  কারণ কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি মুহুর্তে এবং প্রতিটি কাজে আমি  পেয়েছি  অকৃত্রিম সহযোগিতা, ফলশ্রুতিতে আমার কাজসমূহ হয়েছে সহজ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের উদারতা যার ফলে এ জেলায় আমার কর্মকাল ছিল মসৃণ এবং অবিস্মরণীয়।

 

কর্মকালের ১ম দিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করার; জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে  উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহের মধ্যে রয়েছে:

 

১। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্পিত সম্পত্তির লিজ নবায়ন বাবদ মোট ১,৬৫৮০৬২৪ টাকা আদায় করা হয়েছে এবং দাবি আদায়ের হার ৫৩.০১%; যা বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৮.৫৭%।

 

২। হাট বাজার ব্যবস্থাপনায় মৌলভীবাজার জেলায় বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৪ টি বাজার নতুন করে পেরিফেরি করা হয়েছে, ০২ টি নতুন বাজার সৃজন করা হয়েছে। ০৬ টি পরিত্যক্ত বাজার বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং আরো ০৪ টি বাজার বিলুপ্তির জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এ সংক্রান্ত কাজ করা হয়নি।

 

৩। গত অর্থ বছরের তুলনায় বালুমহাল ইজারা খাতে আদায়ের পরিমাণ ৬,১৬,৪২,১০৬ টাকা বেশী।

 

৪। বালুমহাল ও জলমহালের বিষয়ে জেলা প্রশাসক হিসেবে আপোষহীন মনোভাবের কারণে নন-ট্যাক্স রেভিনিউ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯,২৯,৮৪,০৪৭ টাকা।

 

৫। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৮০৭.২৮৮ একর অবৈধ দখলকৃত খাসজমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪২.৮৭৭ একর খাসজমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

 

৬। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার পৃথক রেকর্ডরুম স্থাপন করা হয়েছে।

 

চা-বাগানের ভূমি রেকর্ড সংশোধনে যুগান্তকারী উদ্যোগসমূহের মধ্যে রয়েছে:

৭। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ধারা ২০ এর (৪ক) এবং (৪খ)  উপধারা অনুযায়ী চা বাগানের ভূমির মালিক সরকার। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন মৌজার আরএস রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায়, বিভিন্ন চা বাগানের ভূমি ১/২ নং খতিয়ানে চা বাগানের ইজারা গ্রহীতা (ব্যক্তি/কোম্পানীর) নামে এবং কিছু ভূমি অন্যান্য খতিয়ানে বিভিন্ন ব্যক্তি/কোম্পানীর নামে রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয়েছে। যে সকল চা বাগানের ভূমি ১/২ নং খতিয়ান ও অন্যান্য খতিয়ানে রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয়েছে সে সকল ভূমি ১ নং খতিয়ানে রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং রেকর্ড সংশোধন করা হয়েছে।

 

৮। জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতীত ইজারাকৃত জমি বন্ধক রেখে চা-বাগানের ইজারাদার বরাবর ব্যাংক ঋণ প্রদান না করার বিষয়ে তফসিল ব্যাংকসমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর এ কার্যালয় হতে পত্র প্রেরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চা-বাগানের অনুকূলে ব্যাংক ঋণ মন্জুরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে সার্কুলার জারি করা হয়।যার ফলে চা বাগানের মাধ্যমে দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমে আসবে বলে বিশ্বাস।

 

৯। চা বাগান, হাওর এবং পাহাড় পরিবেষ্টিত প্রকৃতির অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় আগমনের প্রথম দিনেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং আমার এ মুগ্ধতা সকলে কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ জেলার বিখ্যাত পর্যটন স্থানসমূহের সমন্বয়ে স্যুভিনির প্রকাশ করা হয়েছে।

 

১০।  জেলা ব্র্যান্ড-বুকের চতুর্থ সংস্করণ সম্পাদনের কাজ শেষে বর্তমানে প্রিন্টিংয়ে রয়েছে।

১১। জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভাড়া বাসায় পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের কার্যক্রম গত ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ হতে বনশ্রী আবাসিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু করা হয়েছে যা বর্তমানে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

১২। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কাঙ্খিত সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে এ জেলার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের “সবার জন্য পাইথন প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ” চালু করা  হয়েছিল । পরবর্তীতে এ আইডিয়াটি আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

 

আমার বিশ্বাস এ জেলায় আমার  ১ বছর ৫ মাস ০৯ দিনের কার্যক্রম  আপনাদের মনের কোঠায় সম্মানের সহিত গচ্ছিত তাই অধিকতর বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন । তবে যে বিষয়টি আমি সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করছি সেটি হলো যোগদানের দিন থেকে প্রতিটি প্রতিকূল এবং অনুকূল  সময়ে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আপনাদের পাশে থাকার। তথাপিও উল্লিখিত কর্মকালে যা কিছু অর্জন সবই আপনাদের সহযোগিতার ফসল এবং ব্যার্থতার দায়ভার সম্পূর্ণ আমার।

 

পরিশেষে আমি আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি এবং আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া চাচ্ছি; আল্লাহ হাফেজ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

১ বছর ৫ মাস ৯ দিন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম

আপডেট সময় ০৯:১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক ফেসবুক পেইজে উনার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো

আসসালামু আলাইকুম

সম্মানিত মৌলভীবাজারবাসী,

মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা যে হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.)এর পবিত্রভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দানের জন্য। অশেষ কৃতজ্ঞতা এই জেলার সকল সম্মানিত জনগণ এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মেধাবী এবং চৌকস  সহকর্মীদের  প্রতি  কারণ কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি মুহুর্তে এবং প্রতিটি কাজে আমি  পেয়েছি  অকৃত্রিম সহযোগিতা, ফলশ্রুতিতে আমার কাজসমূহ হয়েছে সহজ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের উদারতা যার ফলে এ জেলায় আমার কর্মকাল ছিল মসৃণ এবং অবিস্মরণীয়।

 

কর্মকালের ১ম দিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করার; জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে  উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহের মধ্যে রয়েছে:

 

১। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্পিত সম্পত্তির লিজ নবায়ন বাবদ মোট ১,৬৫৮০৬২৪ টাকা আদায় করা হয়েছে এবং দাবি আদায়ের হার ৫৩.০১%; যা বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৮.৫৭%।

 

২। হাট বাজার ব্যবস্থাপনায় মৌলভীবাজার জেলায় বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৪ টি বাজার নতুন করে পেরিফেরি করা হয়েছে, ০২ টি নতুন বাজার সৃজন করা হয়েছে। ০৬ টি পরিত্যক্ত বাজার বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং আরো ০৪ টি বাজার বিলুপ্তির জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এ সংক্রান্ত কাজ করা হয়নি।

 

৩। গত অর্থ বছরের তুলনায় বালুমহাল ইজারা খাতে আদায়ের পরিমাণ ৬,১৬,৪২,১০৬ টাকা বেশী।

 

৪। বালুমহাল ও জলমহালের বিষয়ে জেলা প্রশাসক হিসেবে আপোষহীন মনোভাবের কারণে নন-ট্যাক্স রেভিনিউ বৃদ্ধি পেয়েছে ৯,২৯,৮৪,০৪৭ টাকা।

 

৫। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৮০৭.২৮৮ একর অবৈধ দখলকৃত খাসজমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪২.৮৭৭ একর খাসজমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

 

৬। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার পৃথক রেকর্ডরুম স্থাপন করা হয়েছে।

 

চা-বাগানের ভূমি রেকর্ড সংশোধনে যুগান্তকারী উদ্যোগসমূহের মধ্যে রয়েছে:

৭। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ধারা ২০ এর (৪ক) এবং (৪খ)  উপধারা অনুযায়ী চা বাগানের ভূমির মালিক সরকার। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন মৌজার আরএস রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায়, বিভিন্ন চা বাগানের ভূমি ১/২ নং খতিয়ানে চা বাগানের ইজারা গ্রহীতা (ব্যক্তি/কোম্পানীর) নামে এবং কিছু ভূমি অন্যান্য খতিয়ানে বিভিন্ন ব্যক্তি/কোম্পানীর নামে রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয়েছে। যে সকল চা বাগানের ভূমি ১/২ নং খতিয়ান ও অন্যান্য খতিয়ানে রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয়েছে সে সকল ভূমি ১ নং খতিয়ানে রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং রেকর্ড সংশোধন করা হয়েছে।

 

৮। জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতীত ইজারাকৃত জমি বন্ধক রেখে চা-বাগানের ইজারাদার বরাবর ব্যাংক ঋণ প্রদান না করার বিষয়ে তফসিল ব্যাংকসমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর এ কার্যালয় হতে পত্র প্রেরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চা-বাগানের অনুকূলে ব্যাংক ঋণ মন্জুরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে সার্কুলার জারি করা হয়।যার ফলে চা বাগানের মাধ্যমে দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমে আসবে বলে বিশ্বাস।

 

৯। চা বাগান, হাওর এবং পাহাড় পরিবেষ্টিত প্রকৃতির অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় আগমনের প্রথম দিনেই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং আমার এ মুগ্ধতা সকলে কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ জেলার বিখ্যাত পর্যটন স্থানসমূহের সমন্বয়ে স্যুভিনির প্রকাশ করা হয়েছে।

 

১০।  জেলা ব্র্যান্ড-বুকের চতুর্থ সংস্করণ সম্পাদনের কাজ শেষে বর্তমানে প্রিন্টিংয়ে রয়েছে।

১১। জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভাড়া বাসায় পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের কার্যক্রম গত ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ হতে বনশ্রী আবাসিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু করা হয়েছে যা বর্তমানে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

১২। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কাঙ্খিত সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে এ জেলার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের “সবার জন্য পাইথন প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ” চালু করা  হয়েছিল । পরবর্তীতে এ আইডিয়াটি আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

 

আমার বিশ্বাস এ জেলায় আমার  ১ বছর ৫ মাস ০৯ দিনের কার্যক্রম  আপনাদের মনের কোঠায় সম্মানের সহিত গচ্ছিত তাই অধিকতর বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন । তবে যে বিষয়টি আমি সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করছি সেটি হলো যোগদানের দিন থেকে প্রতিটি প্রতিকূল এবং অনুকূল  সময়ে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আপনাদের পাশে থাকার। তথাপিও উল্লিখিত কর্মকালে যা কিছু অর্জন সবই আপনাদের সহযোগিতার ফসল এবং ব্যার্থতার দায়ভার সম্পূর্ণ আমার।

 

পরিশেষে আমি আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করছি এবং আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া চাচ্ছি; আল্লাহ হাফেজ।