ঢাকা ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ভালোবাসার দিন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৪৯ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঘরে থাকুন আর নাই থাকুন আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। অনেক বছর ধরেই ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে টিএসসি, চারুকলা ও শাহবাগ এলাকা। তাই এসব বিশেষ দিনগুলোতে এই এলাকায় ভিড় করে সাংস্কৃত পূজারী যত তরুণ-তরুণীরা। আজও এর ব্যতিক্রম নয়।
আজ যদিও ভালোবাসা দিবস। কিন্তু ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। এটা শুধুমাত্র একটি প্রতীকি দিন। আমরা আমাদের প্রিয়জনকে সারাবছরই ভালোবাসি। বাঙ্গালী আবেগী ও সংস্কৃতমনা জাতি। এরা খারাপকে বর্জনের মধ্য দিয়ে ভালোকেই গ্রহণ করে। পৃথিবীর যত ভালো উদ্যোগ তা দ্রূতই এদেশে চলে আসে। পৃথিবী যেমন দ্রূত টেকনোলজির দিকে এগুচ্ছে, এই দেশও তা থেকে পিছিয়ে নেই।

এদেশের মানুষ আসলে শান্তির মানুষ। যুদ্ধ নয় আসলে এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে ভালোবাসা। এই ভালবাসা দিসব তাই যত যুদ্ধ অশান্তি সব কিছুকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে নেবে এই প্রত্যাশায় সবাই মিলিত হয়। দিনটিকে শুধু এদেশে নয় সারা পৃথিবীতেই খুব ভালোবেসে পালন করা হয়।

১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের সর্ব প্রথম আবির্ভাব ঘটে। সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরুটি করেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকে এই আমাদের দেশে এই বিশেষ দিনটির শুরু। এবং ধিরে ধিরে জনপ্রিয় হতে হতে আজ প্রতিটি ঘরেই এর আবেদন। ঐ যে বলেছি বাংলাদেশীরা আবেগী যা গ্রহণ করে তা ভালভাবেই গ্রহণ করে, আর যা পরিত্যাগ করে তা ভালোভাবেই পরিত্যাগ করে।

ভালোবাসা দিবেসের ইতিহাস ঘেটে যানা যায়, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার ছিল নিষিদ্ধ। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।

খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল – সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর – সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট – সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর – আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর – সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ – সেন্ট পযাট্রিক ডে। এই রকমই একজন পাদ্রী ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে আজকের এই দিবস সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে।

পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা থেকে বিরত থাকার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।

বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। মূলত এদেশ আমেরিকানদেরই অনুকরণ করতে পছন্দ করে তার আরেকটি প্রমাণ এই দেশে এই দিবসের জনপ্রিয়তা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আজ ভালোবাসার দিন

আপডেট সময় ১১:৫০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ঘরে থাকুন আর নাই থাকুন আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। অনেক বছর ধরেই ঢাকা শহরের সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে টিএসসি, চারুকলা ও শাহবাগ এলাকা। তাই এসব বিশেষ দিনগুলোতে এই এলাকায় ভিড় করে সাংস্কৃত পূজারী যত তরুণ-তরুণীরা। আজও এর ব্যতিক্রম নয়।
আজ যদিও ভালোবাসা দিবস। কিন্তু ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। এটা শুধুমাত্র একটি প্রতীকি দিন। আমরা আমাদের প্রিয়জনকে সারাবছরই ভালোবাসি। বাঙ্গালী আবেগী ও সংস্কৃতমনা জাতি। এরা খারাপকে বর্জনের মধ্য দিয়ে ভালোকেই গ্রহণ করে। পৃথিবীর যত ভালো উদ্যোগ তা দ্রূতই এদেশে চলে আসে। পৃথিবী যেমন দ্রূত টেকনোলজির দিকে এগুচ্ছে, এই দেশও তা থেকে পিছিয়ে নেই।

এদেশের মানুষ আসলে শান্তির মানুষ। যুদ্ধ নয় আসলে এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে ভালোবাসা। এই ভালবাসা দিসব তাই যত যুদ্ধ অশান্তি সব কিছুকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে নেবে এই প্রত্যাশায় সবাই মিলিত হয়। দিনটিকে শুধু এদেশে নয় সারা পৃথিবীতেই খুব ভালোবেসে পালন করা হয়।

১৯৯৩ সালের দিকে আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবসের সর্ব প্রথম আবির্ভাব ঘটে। সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান পড়াশোনা করেছেন লন্ডনে। পাশ্চাত্যের রীতিনীতিতে তিনি ছিলেন অভ্যস্ত। দেশে ফিরে তিনিই ভালোবাসা দিবসের শুরুটি করেন। এ নিয়ে অনেক ধরনের মতবিরোধ থাকলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের চিন্তাটি নতুন প্রজন্মকে বেশি আকর্ষণ করে। সে থেকে এই আমাদের দেশে এই বিশেষ দিনটির শুরু। এবং ধিরে ধিরে জনপ্রিয় হতে হতে আজ প্রতিটি ঘরেই এর আবেদন। ঐ যে বলেছি বাংলাদেশীরা আবেগী যা গ্রহণ করে তা ভালভাবেই গ্রহণ করে, আর যা পরিত্যাগ করে তা ভালোভাবেই পরিত্যাগ করে।

ভালোবাসা দিবেসের ইতিহাস ঘেটে যানা যায়, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার ছিল নিষিদ্ধ। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।

খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল – সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর – সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট – সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর – আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর – সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ – সেন্ট পযাট্রিক ডে। এই রকমই একজন পাদ্রী ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে আজকের এই দিবস সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে।

পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন করা থেকে বিরত থাকার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।

বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়। মূলত এদেশ আমেরিকানদেরই অনুকরণ করতে পছন্দ করে তার আরেকটি প্রমাণ এই দেশে এই দিবসের জনপ্রিয়তা।