ঢাকা ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবীতে শ্রীমঙ্গলে ছাত্র ও শিক্ষক সমাবেশ  কমলগঞ্জ বজ্রপাতে যুবকের মৃ-ত্যু লাখাইয়ে কালবৈশাখী তান্ডবে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি সহ গাছপালা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ১ জনের মৃত্যু মৌলভীবাজারে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ব্রিফিং প্যারেড মৌলভীবাজারে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্ধোধন মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশকাপ অক্টোবরে শুরু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রিজাইটিং কর্মকর্তাসহ ৯ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা  মৌলভীবাজারে বজ্রপাতে কৃষকের মৃ -ত্যু কুলাউড়ায় ছেলেকে মিথ্যা মামালা থেকে বাঁচাতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন জুড়ীতে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্টিত

আ.লীগের এক-তৃতীয়াংশ এমপি নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হতে যাচ্ছেন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৫৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৬২৩ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীরাজার২৪ ডেস্কঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নাম এসেছে এমন এমপিদের কপাল পুড়তে যাচ্ছে এবার। আর তাদের সংখ্যাও কম নয়। বর্তমান সংসদ সদস্যদের তিন ভাগের এক ভাগ নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া বার্ধক্যের বিষয় তো রয়েছেই। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ৫৬ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য নৌকার মনোনয়ন পাননি। এর আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন আওয়ামী লীগের ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, দ্বাদশ নির্বাচনে বাদ পড়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে দলের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করেছেন এবং জনগণের কাছে বিগত দিনে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

চলতি বছর সংসদে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য সার্ভে চলছে। আমার কাছে সার্ভে রিপোর্ট রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করেছেন, যারা জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক নেই, এলাকায় যান না তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’ কোনো ধরনের তদবির এ ক্ষেত্রে কাজে আসবে না বলে সতর্ক করেন দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

 

মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে এগিয়ে আছেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান। তিনি নিজের ওয়ার্ডের বাইরে খুব বেশি সময় দেন না বলে স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন। ওই আসনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এমপির সম্পর্কের অবনতি দৃশ্যমান। করোনাকালীয় থেকে তিনি স্থানীয় ভোটারদের কাছে যাতায়াত ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

একই ঝুঁকিতে আছেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান।

জনবিচ্ছন্ন ও গ্রুপিংয়ের কারণে মনোনয়ন-ঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির, কক্সবাজার-৪-এর শাহীন আক্তার চৌধুরী, ভোলা-৪-এর আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব, হবিগঞ্জ-১-এর গাজী মো. শাহনেওয়াজ, হবিগঞ্জ-৩-এর আবু জাহির, রাজবাড়ী-২-এর এমপি জিল্লুল হাকিম, যশোর-১-এর শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২-এর মো. নাসির উদ্দিন, সাতক্ষীরা-৩-এর আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪-এর এস এম জগলুল হায়দার। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। তাদের এলাকায় কম দেখা যায় বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের।

এ ছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণ বাদ পড়তে পারেন প্রবীণ নেতা ঢাকা-৫ আসনের এমপি আগাঁ খান মিন্টু, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন প্রমুখ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে বর্তমান এমপিদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে দলের এমপি হোক বা মন্ত্রী হোক অথবা দলের বড় কোনো পদে থাকা নেতা হোক, যারা জনস্বার্থে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা মনোনয়ন পাবেন না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডে প্রার্থীর যোগ্যতা, সক্ষমতা, জনপ্রিয়তা দেখা হয়। গত ২০ বছরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিবারই মনোনয়নে পরিবর্তন এসেছে। সেখানে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। এটি দলের একটি পলিসি বলা যেতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। তৃণমূলের নেতারা সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কর্মীদের অবমূল্যায়ন, মনোনয়ন বাণিজ্য, ‘ভাই লীগ’ গঠন, বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের দলীয় পদে স্থান দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন; যা গড়িয়েছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পর্যন্ত। গত ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনার সামনে এমপিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা পর্যায়ের অন্তত ছয়জন নেতা।

লাল তালিকায় বিতর্কিত সংসদ সদস্যরা

২০২০ সালের ৩১ জুলাই খুন হন গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম তালুকদার নিক্সন। তিনি সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। নিক্সন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সুমনের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে গত ৪ জুন। ভাইরাল হওয়া ২০ মিনিট ২১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে সুমনের বক্তব্য অনুযায়ী খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির নাম আসে। আসামি সুমন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের গারদখানায় রেকর্ড করা এক ভাইরাল ভিডিওতে একাধিকবার দাবি করেছেন, টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির নিক্সন হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী। পাশাপাশি এমপির পিএস মির্জা আসিফ মাসুদসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সবার কথাও বলেছেন তিনি। এই সুমন একসময় এমপি ছোট মনির ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। তৃণমূলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে না থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিদেশ থেকে এসে এমপি বনে যান ছোট মনি। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে এই সংসদ সদস্য নৌকা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

লাল তালিকার শীর্ষে থাকা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুরাদের একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, মুরাদ একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করতেনই না, বরং এলাকার জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুরাদের কফিনে শেষ পেরেক ছিল ঢাকায় চলচিত্রের দুজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁস হওয়া। এই ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদকে পদত্যাগ করতে হয়। সর্বশেষ জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকেও মুরাদকে সরাতে মিছিল করেন স্থানীয় লোকজন।

দলের নীতিনির্ধারণীর সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি খন্দকার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ নেই। স্থানীয় এমপি মাঠ ছেড়ে দিয়ে বিদেশ থাকায় এ আসনে বিকল্প খুঁজছে আওয়ামী লীগ।

এ ছাড়া মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিব এ মিল্লাত মুন্না। নিজ আসনে একাধিক গ্রুপিং ও মাইম্যান তৈরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই আসনে একাধিক গ্রুপিংয়ের বলি হয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী, যা গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড পর্যন্ত। যার কারণে বিলুপ্ত করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। নতুন সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও বাদ পড়েন তিনি।

নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। জেলার জ্যেষ্ঠ নেতাদের লাঞ্ছিত করা, মাইম্যান তৈরি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ গুরুতর অভিযোগে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এবার শিমুলের বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। এর সঙ্গে স্থানীয় দুই এমপি এবং সরকারের এক প্রতিমন্ত্রীও সায় দিচ্ছেন।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দলীয় কর্মীদের বাদ দিয়ে ‘ভাই লীগ’ তৈরির অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জের বিরুদ্ধে। এলাকায় জর্জ লীগ নামে বাহিনী রয়েছে তার। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নিতে পেরেছেন তিনি। ওই আসনের তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে এমপি জর্জ লীগ বনাম আওয়ামী লীগ চলে। কেউ জর্জ লীগের বিরুদ্ধে গেলেই মামলা রেডি থাকে। এসব মামলার আসামি আওয়ামী লীগেরই সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে এমপির মামলা চলমান রয়েছে।

 

মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। গত বছর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। দলের এমপি বনাম উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও।

মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। চলতি বছর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে প্রকাশ্যে কিলঘুষি মারার অভিযোগ ওঠে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। ১৫ মিনিট ধরে পেটানো হয় শিক্ষককে। পরে শিক্ষককে দিয়ে জোরপূর্বক এমপির পক্ষে সাফাই গাইতে বাধ্য করেন ওমর ফারুক। এ নিয়ে রাজশাহীসহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও।

মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথও। দুই মেয়াদে আসনটিতে এমপি হলেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এমপির কর্মকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন ও তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রার্থীকে জিতিয়ে এনেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে চারটি খুন, শতাধিক আহত, নির্বাচন স্থগিত, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এই সংসদ সদস্যের নাম আসে। এ ছাড়া স্থানীয় মেয়রকে কোপানোর হুমকি দিয়ে পুলিশের ওসির সঙ্গে তার কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া তৃণমূলে দলের মধ্যে কোন্দলের জন্য অভিযুক্ত সংসদ সদস্যরাও মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে যাচ্ছেন। নীলফামারী-১ আসনের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার, পঞ্চগড়-১ আসনের মাজহারুল হক প্রধান, নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলম, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আসলাম হোসেন সওদাগরসহ রাজশাহীর পাঁচ এমপির বিরুদ্ধে এলাকায় গ্রুপিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।

এই গ্রুপিংয়ের দৌড়ে মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন পটুয়াখালীর চারজন এমপি। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

কিছুটা ভিন্ন চিত্র খুলনায়। এই বিভাগে মোট ছয়টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে একটি ছাড়া পাঁচটিতে অন্তত ৩২ নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। খুলনা-১, ৫ ও ৬ এই তিনটি আসনের এমপিরা নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে এখানে প্রার্থীও বেশি।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আ.লীগের এক-তৃতীয়াংশ এমপি নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হতে যাচ্ছেন

আপডেট সময় ০৭:৫৪:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

মৌলভীরাজার২৪ ডেস্কঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নাম এসেছে এমন এমপিদের কপাল পুড়তে যাচ্ছে এবার। আর তাদের সংখ্যাও কম নয়। বর্তমান সংসদ সদস্যদের তিন ভাগের এক ভাগ নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া বার্ধক্যের বিষয় তো রয়েছেই। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ৫৬ জন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য নৌকার মনোনয়ন পাননি। এর আগে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন আওয়ামী লীগের ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, দ্বাদশ নির্বাচনে বাদ পড়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে দলের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করেছেন এবং জনগণের কাছে বিগত দিনে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন এমপিদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

চলতি বছর সংসদে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য সার্ভে চলছে। আমার কাছে সার্ভে রিপোর্ট রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করেছেন, যারা জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন এবং এলাকার লোকজনের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক নেই, এলাকায় যান না তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’ কোনো ধরনের তদবির এ ক্ষেত্রে কাজে আসবে না বলে সতর্ক করেন দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

 

মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে এগিয়ে আছেন ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাদেক খান। তিনি নিজের ওয়ার্ডের বাইরে খুব বেশি সময় দেন না বলে স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন। ওই আসনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এমপির সম্পর্কের অবনতি দৃশ্যমান। করোনাকালীয় থেকে তিনি স্থানীয় ভোটারদের কাছে যাতায়াত ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

একই ঝুঁকিতে আছেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান।

জনবিচ্ছন্ন ও গ্রুপিংয়ের কারণে মনোনয়ন-ঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির, কক্সবাজার-৪-এর শাহীন আক্তার চৌধুরী, ভোলা-৪-এর আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব, হবিগঞ্জ-১-এর গাজী মো. শাহনেওয়াজ, হবিগঞ্জ-৩-এর আবু জাহির, রাজবাড়ী-২-এর এমপি জিল্লুল হাকিম, যশোর-১-এর শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২-এর মো. নাসির উদ্দিন, সাতক্ষীরা-৩-এর আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪-এর এস এম জগলুল হায়দার। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। তাদের এলাকায় কম দেখা যায় বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের।

এ ছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণ বাদ পড়তে পারেন প্রবীণ নেতা ঢাকা-৫ আসনের এমপি আগাঁ খান মিন্টু, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন প্রমুখ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মাধ্যমে বর্তমান এমপিদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে দলের এমপি হোক বা মন্ত্রী হোক অথবা দলের বড় কোনো পদে থাকা নেতা হোক, যারা জনস্বার্থে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা মনোনয়ন পাবেন না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, দলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডে প্রার্থীর যোগ্যতা, সক্ষমতা, জনপ্রিয়তা দেখা হয়। গত ২০ বছরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিতরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিবারই মনোনয়নে পরিবর্তন এসেছে। সেখানে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। এটি দলের একটি পলিসি বলা যেতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। তৃণমূলের নেতারা সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কর্মীদের অবমূল্যায়ন, মনোনয়ন বাণিজ্য, ‘ভাই লীগ’ গঠন, বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের দলীয় পদে স্থান দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন; যা গড়িয়েছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পর্যন্ত। গত ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনার সামনে এমপিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা পর্যায়ের অন্তত ছয়জন নেতা।

লাল তালিকায় বিতর্কিত সংসদ সদস্যরা

২০২০ সালের ৩১ জুলাই খুন হন গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম তালুকদার নিক্সন। তিনি সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। নিক্সন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সুমনের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে গত ৪ জুন। ভাইরাল হওয়া ২০ মিনিট ২১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে সুমনের বক্তব্য অনুযায়ী খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির নাম আসে। আসামি সুমন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালতের গারদখানায় রেকর্ড করা এক ভাইরাল ভিডিওতে একাধিকবার দাবি করেছেন, টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির নিক্সন হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী। পাশাপাশি এমপির পিএস মির্জা আসিফ মাসুদসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য সবার কথাও বলেছেন তিনি। এই সুমন একসময় এমপি ছোট মনির ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। তৃণমূলে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে না থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিদেশ থেকে এসে এমপি বনে যান ছোট মনি। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলে পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আগামী নির্বাচনে এই সংসদ সদস্য নৌকা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

লাল তালিকার শীর্ষে থাকা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুরাদের একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, মুরাদ একসময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করতেনই না, বরং এলাকার জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুরাদের কফিনে শেষ পেরেক ছিল ঢাকায় চলচিত্রের দুজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁস হওয়া। এই ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে মুরাদকে পদত্যাগ করতে হয়। সর্বশেষ জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকেও মুরাদকে সরাতে মিছিল করেন স্থানীয় লোকজন।

দলের নীতিনির্ধারণীর সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি খন্দকার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ নেই। স্থানীয় এমপি মাঠ ছেড়ে দিয়ে বিদেশ থাকায় এ আসনে বিকল্প খুঁজছে আওয়ামী লীগ।

এ ছাড়া মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিব এ মিল্লাত মুন্না। নিজ আসনে একাধিক গ্রুপিং ও মাইম্যান তৈরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই আসনে একাধিক গ্রুপিংয়ের বলি হয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী, যা গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড পর্যন্ত। যার কারণে বিলুপ্ত করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। নতুন সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও বাদ পড়েন তিনি।

নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। জেলার জ্যেষ্ঠ নেতাদের লাঞ্ছিত করা, মাইম্যান তৈরি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ গুরুতর অভিযোগে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এবার শিমুলের বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। এর সঙ্গে স্থানীয় দুই এমপি এবং সরকারের এক প্রতিমন্ত্রীও সায় দিচ্ছেন।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দলীয় কর্মীদের বাদ দিয়ে ‘ভাই লীগ’ তৈরির অভিযোগ রয়েছে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জের বিরুদ্ধে। এলাকায় জর্জ লীগ নামে বাহিনী রয়েছে তার। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নিতে পেরেছেন তিনি। ওই আসনের তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে এমপি জর্জ লীগ বনাম আওয়ামী লীগ চলে। কেউ জর্জ লীগের বিরুদ্ধে গেলেই মামলা রেডি থাকে। এসব মামলার আসামি আওয়ামী লীগেরই সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। অসংখ্য নেতা-কর্মীর নামে এমপির মামলা চলমান রয়েছে।

 

মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। গত বছর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। দলের এমপি বনাম উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও।

মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। চলতি বছর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে প্রকাশ্যে কিলঘুষি মারার অভিযোগ ওঠে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। ১৫ মিনিট ধরে পেটানো হয় শিক্ষককে। পরে শিক্ষককে দিয়ে জোরপূর্বক এমপির পক্ষে সাফাই গাইতে বাধ্য করেন ওমর ফারুক। এ নিয়ে রাজশাহীসহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও।

মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথও। দুই মেয়াদে আসনটিতে এমপি হলেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এমপির কর্মকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন ও তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রার্থীকে জিতিয়ে এনেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে চারটি খুন, শতাধিক আহত, নির্বাচন স্থগিত, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এই সংসদ সদস্যের নাম আসে। এ ছাড়া স্থানীয় মেয়রকে কোপানোর হুমকি দিয়ে পুলিশের ওসির সঙ্গে তার কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া তৃণমূলে দলের মধ্যে কোন্দলের জন্য অভিযুক্ত সংসদ সদস্যরাও মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে যাচ্ছেন। নীলফামারী-১ আসনের এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার, পঞ্চগড়-১ আসনের মাজহারুল হক প্রধান, নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলম, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আসলাম হোসেন সওদাগরসহ রাজশাহীর পাঁচ এমপির বিরুদ্ধে এলাকায় গ্রুপিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।

এই গ্রুপিংয়ের দৌড়ে মনোনয়ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন পটুয়াখালীর চারজন এমপি। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

কিছুটা ভিন্ন চিত্র খুলনায়। এই বিভাগে মোট ছয়টি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে একটি ছাড়া পাঁচটিতে অন্তত ৩২ নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। খুলনা-১, ৫ ও ৬ এই তিনটি আসনের এমপিরা নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের কারণে এখানে প্রার্থীও বেশি।