ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একজন সফল মানুষ গড়ার  কারিগর শ্রদ্ধেয় আব্দুল করিম 

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:০১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৬৫৬ বার পড়া হয়েছে

ফয়সল আহমদ রুহেল : বাবা ছিলেন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে নিজ এলাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পিতা-মাতার ইচ্ছে ছিল ছেলে আলিম হবে। তাদের সেই স্বপ্নও পূরণ হয়। বাবাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে দেখে আব্দুল করিম সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সামনের দিকে অগ্রসর হন। শ্রদ্ধেয় আব্দুল করিম মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক (হেড মাওলানা) হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন।

জন্ম : গুণী শিক্ষক আব্দুল করিম জন্ম ১৯৬১ সালের ১ মার্চ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মুশুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল আলী, মাতা মরহুমা জামিলা খাতুন। আব্দুল করিমের পিতা একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় ও এলাকাবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতায় মশারিয়া গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেই মাদ্রাসা মশারিয়া এমদাদিয়া আলিম মাদ্রাসা হিসাবে সুনামের সাথে চলছে।
বর্ণাঢ্য জীবন : আব্দুল করিম ছাত্রজীবনে অনেকের বাড়িতে লজিং থেকে পড়ালেখা চালিয়েছেন। বিশ্বনাথ মাদ্রাসায় পড়ার সময় ৬ কি.মি. দূরে থেকে মাদ্রাসায় পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল তিনি মৌলানা হবেন। বাবা রাজনগর হতে পায়ে হেঁটে আব্দুল করিমকে দেখার জন্য প্রতিমাসে বিশ্বনাথ যেতেন।
শিক্ষা জীবন : আব্দুল করিম  নিজ গ্রামে মশারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে ভানুগাছ কেরামত আলী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রথম পরীক্ষা দাখিল বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালে বিশ্বনাথ সাফাত আলী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৭৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষা দিয়ে (বর্তমান আইএ) ৩য় বিভাগে এবং ১৯৭৭ ইং সালে ঐ মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় দিয়ে (বর্তমান বিএ) ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তৎপরবর্তী সময়ে কামেল (টাইটেল) ক্লাসের জন্য সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কামিল পরীক্ষা দিয়ে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবন : আব্দুল করিম ১৯৮০ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক ( হেড মাওলানা) হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ৬ মাস এই বিদ্যালয়ে চাকুরি করার পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চাকুরি হতে অবসরে যান। প্রথম চাকুরিতে প্রবেশকালীন সময়ে ঐ স্কুলের শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ট ছিলেন। সবাই তাঁকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেছেন।
পারিবারিক : আব্দুল করিম পারিবারিক জীবনে এক মেয়ে এবং দুই ছেলের জনক। মেয়ে মাহমুদা আক্তার বিএ অনার্স ২য় বর্ষে থাকাবস্থায় প্রাইমারী স্কুলে চাকুরী হয়ে যায়। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জননী। শিক্ষকের দ্বিতীয় সন্তান শফি আহমদ অনার্স মাস্টার্স শেষ করার পর বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আরেক সন্তান আশরাফ মাহমুদ অনার্স মাস্টার্স শেষ করার পর তিনিও বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনগর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর আব্দুল করিমের দীর্ঘ ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে লোভ-লালসা কখনও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। শিক্ষকতার জীবনে তিনি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। বিদ্যা বা শিক্ষার আলোর পরশ ছাড়া মানুষ কখনো সভ্য বা আলোকিত হতে পারবে না। এই উপলব্ধি থেকে হয়তো আব্দুল করিম শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িয়ে যান। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী অর্জনের মধ্যদিয়ে নিজেকে সবার সামনে যোগ্য করে গড়ে তোলেন। একজন সফল মানুষ গড়ার কারিগর আব্দুল করিম স্যারের দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

একজন সফল মানুষ গড়ার  কারিগর শ্রদ্ধেয় আব্দুল করিম 

আপডেট সময় ০৬:০১:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফয়সল আহমদ রুহেল : বাবা ছিলেন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক। ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে নিজ এলাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। পিতা-মাতার ইচ্ছে ছিল ছেলে আলিম হবে। তাদের সেই স্বপ্নও পূরণ হয়। বাবাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে দেখে আব্দুল করিম সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি কঠোর অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সামনের দিকে অগ্রসর হন। শ্রদ্ধেয় আব্দুল করিম মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক (হেড মাওলানা) হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন।

জন্ম : গুণী শিক্ষক আব্দুল করিম জন্ম ১৯৬১ সালের ১ মার্চ মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার মুশুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল আলী, মাতা মরহুমা জামিলা খাতুন। আব্দুল করিমের পিতা একজন ধার্মিক ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় ও এলাকাবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতায় মশারিয়া গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেই মাদ্রাসা মশারিয়া এমদাদিয়া আলিম মাদ্রাসা হিসাবে সুনামের সাথে চলছে।
বর্ণাঢ্য জীবন : আব্দুল করিম ছাত্রজীবনে অনেকের বাড়িতে লজিং থেকে পড়ালেখা চালিয়েছেন। বিশ্বনাথ মাদ্রাসায় পড়ার সময় ৬ কি.মি. দূরে থেকে মাদ্রাসায় পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল তিনি মৌলানা হবেন। বাবা রাজনগর হতে পায়ে হেঁটে আব্দুল করিমকে দেখার জন্য প্রতিমাসে বিশ্বনাথ যেতেন।
শিক্ষা জীবন : আব্দুল করিম  নিজ গ্রামে মশারিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে ভানুগাছ কেরামত আলী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রথম পরীক্ষা দাখিল বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৪ সালে বিশ্বনাথ সাফাত আলী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৭৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষা দিয়ে (বর্তমান আইএ) ৩য় বিভাগে এবং ১৯৭৭ ইং সালে ঐ মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় দিয়ে (বর্তমান বিএ) ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তৎপরবর্তী সময়ে কামেল (টাইটেল) ক্লাসের জন্য সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কামিল পরীক্ষা দিয়ে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
কর্মজীবন : আব্দুল করিম ১৯৮০ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক ( হেড মাওলানা) হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ৬ মাস এই বিদ্যালয়ে চাকুরি করার পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চাকুরি হতে অবসরে যান। প্রথম চাকুরিতে প্রবেশকালীন সময়ে ঐ স্কুলের শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ট ছিলেন। সবাই তাঁকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেছেন।
পারিবারিক : আব্দুল করিম পারিবারিক জীবনে এক মেয়ে এবং দুই ছেলের জনক। মেয়ে মাহমুদা আক্তার বিএ অনার্স ২য় বর্ষে থাকাবস্থায় প্রাইমারী স্কুলে চাকুরী হয়ে যায়। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত এবং ৩ সন্তানের জননী। শিক্ষকের দ্বিতীয় সন্তান শফি আহমদ অনার্স মাস্টার্স শেষ করার পর বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আরেক সন্তান আশরাফ মাহমুদ অনার্স মাস্টার্স শেষ করার পর তিনিও বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনগর উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর আব্দুল করিমের দীর্ঘ ৪০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে লোভ-লালসা কখনও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। শিক্ষকতার জীবনে তিনি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বাড়াতে চেষ্টা করেছেন। বিদ্যা বা শিক্ষার আলোর পরশ ছাড়া মানুষ কখনো সভ্য বা আলোকিত হতে পারবে না। এই উপলব্ধি থেকে হয়তো আব্দুল করিম শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িয়ে যান। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী অর্জনের মধ্যদিয়ে নিজেকে সবার সামনে যোগ্য করে গড়ে তোলেন। একজন সফল মানুষ গড়ার কারিগর আব্দুল করিম স্যারের দীর্ঘায়ূ কামনা করি।