ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুল চিকিৎসায় সংকটাপন্ন ৪ বছরের শিশু নাফিসা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:০৫:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১১৭৫ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ। প্রতিনিধিঃ ৪ বছর ৬ মাসের আমাতুল বারী নাফিসা জীবন সংকটাপন্ন। মেয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য শিক্ষিকা ও ব্যাংকার দম্পতি নাফিসাকে ৯ জুন ভারতের খ্রিষ্টান মেডিক্যাল কলেজ ভেলোরে নিয়ে গেছেন। নাফিসার বাবা মো: নুরুল ইসলাম পূবালী ব্যাংক মৌলভীবাজার প্রধান কার্যালয়ে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ও মা মৌলভীবাজার কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।

 

দম্পতির অভিযোগ ঢাকায় আনোয়ার খাঁন মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হসপিটালের চিকিৎসক ডা. এহসানুল বারী রাহাত এর ভুল চিকিৎসায় তাদের মেয়ের জীবন সংকটাপন্ন। ইতিমধ্যে তারা চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন সহ একাধিক জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার এর কাছে লিখিতভাবে পাঠিয়েছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, নাফিসার মাথার পিছনে একটি বরন হলে চলতি বছরের ১০ মার্চ মৌলভীবাজার বেরিরপারস্থ রয়েল ডায়াগনিষ্টক সেন্টারে ডা. এহসানুল বারী রাহাতের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সপ্তাহের ঔষধে বরনটি না কমায় ঢাকা আনোয়ার খাঁন মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হসপিটালে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত দেন ডা. এহসানুল বারী রাহাত। নাফিসার অভিভাবকরা অপারেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. রাহাত বলেন, এটি সামান্য অপারেশন। ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন শেষ করে বাসায় নিয়ে আসতে পারবেন এবং এতে খরচ হবে ১৫/২০ হাজার টাকা। ডাক্তারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ মার্চ নাফিসাকে ঢাকা আনোয়ার খাঁন মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর অপারেশন করার জন্য নাফিসাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষন পর ডা. এহসানুল বারী রাহাত নাফিসার বাবাকে ডেকে বলেন আপনার বাচ্চার টিউমার বাস্ট হয়ে রক্ত ও ময়লা রক্তনালীর বিভিন্ন দিকে প্রবেশ করেছে। যা আমি ভালোভাবে হাতের আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করতেছি। নাফিসা কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চার অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ৮/১০ ব্যাগ রক্ত লাগবে। চিকিৎসার জন্য নাফিসাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। টাকা-পয়সাও লাগবে। আমি ডাক্তারের কথা বুঝতে না পেরে কর্তব্যরত ডাক্তার ও আরো দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানতে পারি নাফিসার ভুল অপারেশন হয়েছে। তাকে এখন সিটিস্ক্যান করা হবে এবং হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হবে এবং ১৯ মার্চ সকালে সিটিস্ক্যান এর রিপোর্ট দেখে পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হবে। আমরা সারারাত নাফিসাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে বাহিরে অপেক্ষা করি। পরদিন সকালে জানতে পারি নাফিসার বরনটি হচ্ছে রক্তনালীর টিউমার। যাকে হেমানজিওমা বলা হয়। যা অপারেশন করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। পরবর্তীতে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে চিকিৎসা বোর্ড গঠন করা হয়। নাফিসার বাবাকে ডেকে চিকিৎসা বোর্ড বলে গতকাল অপারেশনের সময় আপনার বাচ্চার রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা গজ কাপর দিয়ে চাপাচাপি করে কোনোভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছি। এখন ঐ গজ কাপর খোলে বের করে সেলাই করা হবে। সেলাই শুকানোর পর পরবর্তী চিকিৎসা চলবে। কিন্তু যখন আমরা গজ কাপর খোলব এসময় অধিক পরিমান রক্তক্ষরণের কারনে আপনার বাচ্চার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। আপনি অনুমুতি দিলে কাজ শুরু করবো। এই কথা শুনে নাফিসার বাবা অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালের মেজেতে পরে যান।

চিকিৎসা বোর্ডের নিউরো সার্জারী বিভাগের সিনিয়র ডাক্তার নাফিসার পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিয়ে অপারেশনের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৪০ মিনিট পর তিনি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আমাদের বলেন আল্লাহর অশেষ কৃপায় আপনাদের বাচ্চার কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি। ভালোভাবে সেলাই করে দিয়েছি। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। পরবর্তীতে ২২ মার্চ হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। এসময় ডাক্তার এহসানুল বারী রাহাত বলেন, আগামী ২৪ মার্চ মৌলভীবাজার রয়েল ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে আসলে সেলাই ডেসিং করবো এবং ৩১ মার্চ সেলাই কেটে দেব। উনার কথা অনুযায়ী আমরা চেম্বারে গেলে সেলাই ড্রেসিং করেননি। আগামী তারিখে এক সাথে সেলাই কেটে দেবেন বলে আমাদের বিদায় করে দেন। ৩১ মার্চ মৌলভীবাজার শহরের জান্নাত প্রাইভেট হাসপাতালে সেলাই কাটতে গিয়ে দেখা যায় ক্ষতস্থানে পুজ জমে ইনফেকশন হয়ে মাংস পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তখন ডাক্তার ড্রেসিং করেন এবং আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে আরও দুইবার ড্রেসিং করার কথা বলেন। ০৭ এপ্রিল নাফিসাকে অজ্ঞান করে আবার সেলাই করে দেব বলেন। যা আমাদের বুঝে আসেনি। মনে হয় তিনি আবারো ভুল চিকিৎসা করবেন। তাই মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সিনিয়র ডাক্তার আবু বক্কর মোস্তফা স্যারকে দেখালে তিনি বলেন এখানে আবার সেলাই করা যাবে না। প্রতিদিন ড্রেসিং করে শুকাতে হবে। ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। শিশু ডাক্তার এম এ হক এবং তার মূল চিকিৎসক প্রফেসর আফিকুল ইসলাম ও একই কথা বলেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রোগ সম্পর্কে না জেনে প্রযুক্তির যুগে কোনো পরীক্ষা নিরিক্ষা না করে ডাঃ এহসানুল বারী রাহাত ভুল অপারেশন করেন। নির্ধারিত সময়ে ড্রেসিং করেননি।
নাফিসার বাবা ব্যাংকার মো: নুরুল ইসলাম বলেন, ভুল অপারিশন করে ৪/৫ ঘন্টার জায়গা ৪ দিন হাসপাতালে থাকা, ১৫/২০ হাজার টাকার জায়গায় প্রায় ২ লাখ টাকা হাসপাতাল ও অন্যান্য খরচ হয়। পরবর্তীতে ইনফেকশন হয়ে ২ মাস যাবত ড্রেসিং করানোর যন্ত্রনা পেয়ে আমার পরিবার যেমন আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতির মুখে তেমনি মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। ড্রেসিং করে ক্ষতস্তান যত শোকাচ্ছে তেমনিভাবে হেমানজিওমা বড় হচ্ছে। এমতাবস্থায় কি করব বুঝতে পারছি না। তার মূল ডাক্তার আফিকুল ইসলাম এর পরামর্শ অনুযায়ী ভারতে খ্রিষ্টান মেডিক্যাল কলেজ ভেলোরে তিন মাস যাবৎ চিকিৎসারত অবস্থায় আছে নাফিসা। সেখানকার ডাক্তার আমাদের কাছে জানতে ছাইলেন ডা. এহসানুল বারি রাহাত শিশু সার্জারী ডাক্তার নয়। সারে চার বছর বয়সের বাচ্ছার অপারেশন তিনি করতে পারেন না এবং পরবর্তি চিকিৎসায় ওনার অবহেলার কারনে বাচ্চার আজকের এই শারীরিক অবস্থা। ভারতে ৯ মাস অবস্থান করে চিকিৎসা করতে হবে এবং চিকিৎসা ব্যায় বিশ লক্ষ টাকারও বেশি লাগবে। আমি ডা. এহসানুল বারি রাহাতের ভুল চিকিৎসার প্রতিকার চাই। পাশাপাশি আমার উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দাবী করছি।
মৌলভীবাজার রয়েল প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহাদ আলম বলেন, আমার মনে হয় কোনো ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া মেয়েটির অফারেশন করা ঠিক হয়নি। মেয়েটি এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পরবর্তীতে রোগীর বাবা আমার কাছে আসলে পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মিন্টুকে নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেই। কিন্তু ডাক্তার সাহেব সময় না দেয়া সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে ডা. এহসানুল বারী রাহাত এর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বুধবার একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় “স্যার ওটিতে আছেন, আমি উনার সহকারী”। ১ ঘন্টা পরে ফোন দিয়েন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ১ঘন্টা পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ডা. এহসানুল বারী রাহাত নিউরো সার্জন নয়। অপারেশন করা উনার ঠিক হয়নি। শিশু নিউরো সার্জারী অপারেশন করলে ভালো হতো। এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ভুল চিকিৎসায় সংকটাপন্ন ৪ বছরের শিশু নাফিসা

আপডেট সময় ০২:০৫:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশেষ। প্রতিনিধিঃ ৪ বছর ৬ মাসের আমাতুল বারী নাফিসা জীবন সংকটাপন্ন। মেয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য শিক্ষিকা ও ব্যাংকার দম্পতি নাফিসাকে ৯ জুন ভারতের খ্রিষ্টান মেডিক্যাল কলেজ ভেলোরে নিয়ে গেছেন। নাফিসার বাবা মো: নুরুল ইসলাম পূবালী ব্যাংক মৌলভীবাজার প্রধান কার্যালয়ে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ও মা মৌলভীবাজার কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।

 

দম্পতির অভিযোগ ঢাকায় আনোয়ার খাঁন মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হসপিটালের চিকিৎসক ডা. এহসানুল বারী রাহাত এর ভুল চিকিৎসায় তাদের মেয়ের জীবন সংকটাপন্ন। ইতিমধ্যে তারা চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন সহ একাধিক জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার এর কাছে লিখিতভাবে পাঠিয়েছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, নাফিসার মাথার পিছনে একটি বরন হলে চলতি বছরের ১০ মার্চ মৌলভীবাজার বেরিরপারস্থ রয়েল ডায়াগনিষ্টক সেন্টারে ডা. এহসানুল বারী রাহাতের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সপ্তাহের ঔষধে বরনটি না কমায় ঢাকা আনোয়ার খাঁন মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হসপিটালে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত দেন ডা. এহসানুল বারী রাহাত। নাফিসার অভিভাবকরা অপারেশন সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. রাহাত বলেন, এটি সামান্য অপারেশন। ৪/৫ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন শেষ করে বাসায় নিয়ে আসতে পারবেন এবং এতে খরচ হবে ১৫/২০ হাজার টাকা। ডাক্তারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ মার্চ নাফিসাকে ঢাকা আনোয়ার খাঁন মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর অপারেশন করার জন্য নাফিসাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষন পর ডা. এহসানুল বারী রাহাত নাফিসার বাবাকে ডেকে বলেন আপনার বাচ্চার টিউমার বাস্ট হয়ে রক্ত ও ময়লা রক্তনালীর বিভিন্ন দিকে প্রবেশ করেছে। যা আমি ভালোভাবে হাতের আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করতেছি। নাফিসা কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চার অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ৮/১০ ব্যাগ রক্ত লাগবে। চিকিৎসার জন্য নাফিসাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। টাকা-পয়সাও লাগবে। আমি ডাক্তারের কথা বুঝতে না পেরে কর্তব্যরত ডাক্তার ও আরো দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানতে পারি নাফিসার ভুল অপারেশন হয়েছে। তাকে এখন সিটিস্ক্যান করা হবে এবং হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হবে এবং ১৯ মার্চ সকালে সিটিস্ক্যান এর রিপোর্ট দেখে পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হবে। আমরা সারারাত নাফিসাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে বাহিরে অপেক্ষা করি। পরদিন সকালে জানতে পারি নাফিসার বরনটি হচ্ছে রক্তনালীর টিউমার। যাকে হেমানজিওমা বলা হয়। যা অপারেশন করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। পরবর্তীতে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে চিকিৎসা বোর্ড গঠন করা হয়। নাফিসার বাবাকে ডেকে চিকিৎসা বোর্ড বলে গতকাল অপারেশনের সময় আপনার বাচ্চার রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা গজ কাপর দিয়ে চাপাচাপি করে কোনোভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছি। এখন ঐ গজ কাপর খোলে বের করে সেলাই করা হবে। সেলাই শুকানোর পর পরবর্তী চিকিৎসা চলবে। কিন্তু যখন আমরা গজ কাপর খোলব এসময় অধিক পরিমান রক্তক্ষরণের কারনে আপনার বাচ্চার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। আপনি অনুমুতি দিলে কাজ শুরু করবো। এই কথা শুনে নাফিসার বাবা অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালের মেজেতে পরে যান।

চিকিৎসা বোর্ডের নিউরো সার্জারী বিভাগের সিনিয়র ডাক্তার নাফিসার পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিয়ে অপারেশনের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৪০ মিনিট পর তিনি অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আমাদের বলেন আল্লাহর অশেষ কৃপায় আপনাদের বাচ্চার কোনো রক্তক্ষরণ হয়নি। ভালোভাবে সেলাই করে দিয়েছি। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে। পরবর্তীতে ২২ মার্চ হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। এসময় ডাক্তার এহসানুল বারী রাহাত বলেন, আগামী ২৪ মার্চ মৌলভীবাজার রয়েল ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে আসলে সেলাই ডেসিং করবো এবং ৩১ মার্চ সেলাই কেটে দেব। উনার কথা অনুযায়ী আমরা চেম্বারে গেলে সেলাই ড্রেসিং করেননি। আগামী তারিখে এক সাথে সেলাই কেটে দেবেন বলে আমাদের বিদায় করে দেন। ৩১ মার্চ মৌলভীবাজার শহরের জান্নাত প্রাইভেট হাসপাতালে সেলাই কাটতে গিয়ে দেখা যায় ক্ষতস্থানে পুজ জমে ইনফেকশন হয়ে মাংস পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তখন ডাক্তার ড্রেসিং করেন এবং আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে আরও দুইবার ড্রেসিং করার কথা বলেন। ০৭ এপ্রিল নাফিসাকে অজ্ঞান করে আবার সেলাই করে দেব বলেন। যা আমাদের বুঝে আসেনি। মনে হয় তিনি আবারো ভুল চিকিৎসা করবেন। তাই মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের সিনিয়র ডাক্তার আবু বক্কর মোস্তফা স্যারকে দেখালে তিনি বলেন এখানে আবার সেলাই করা যাবে না। প্রতিদিন ড্রেসিং করে শুকাতে হবে। ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। শিশু ডাক্তার এম এ হক এবং তার মূল চিকিৎসক প্রফেসর আফিকুল ইসলাম ও একই কথা বলেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রোগ সম্পর্কে না জেনে প্রযুক্তির যুগে কোনো পরীক্ষা নিরিক্ষা না করে ডাঃ এহসানুল বারী রাহাত ভুল অপারেশন করেন। নির্ধারিত সময়ে ড্রেসিং করেননি।
নাফিসার বাবা ব্যাংকার মো: নুরুল ইসলাম বলেন, ভুল অপারিশন করে ৪/৫ ঘন্টার জায়গা ৪ দিন হাসপাতালে থাকা, ১৫/২০ হাজার টাকার জায়গায় প্রায় ২ লাখ টাকা হাসপাতাল ও অন্যান্য খরচ হয়। পরবর্তীতে ইনফেকশন হয়ে ২ মাস যাবত ড্রেসিং করানোর যন্ত্রনা পেয়ে আমার পরিবার যেমন আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতির মুখে তেমনি মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। ড্রেসিং করে ক্ষতস্তান যত শোকাচ্ছে তেমনিভাবে হেমানজিওমা বড় হচ্ছে। এমতাবস্থায় কি করব বুঝতে পারছি না। তার মূল ডাক্তার আফিকুল ইসলাম এর পরামর্শ অনুযায়ী ভারতে খ্রিষ্টান মেডিক্যাল কলেজ ভেলোরে তিন মাস যাবৎ চিকিৎসারত অবস্থায় আছে নাফিসা। সেখানকার ডাক্তার আমাদের কাছে জানতে ছাইলেন ডা. এহসানুল বারি রাহাত শিশু সার্জারী ডাক্তার নয়। সারে চার বছর বয়সের বাচ্ছার অপারেশন তিনি করতে পারেন না এবং পরবর্তি চিকিৎসায় ওনার অবহেলার কারনে বাচ্চার আজকের এই শারীরিক অবস্থা। ভারতে ৯ মাস অবস্থান করে চিকিৎসা করতে হবে এবং চিকিৎসা ব্যায় বিশ লক্ষ টাকারও বেশি লাগবে। আমি ডা. এহসানুল বারি রাহাতের ভুল চিকিৎসার প্রতিকার চাই। পাশাপাশি আমার উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দাবী করছি।
মৌলভীবাজার রয়েল প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহাদ আলম বলেন, আমার মনে হয় কোনো ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়া মেয়েটির অফারেশন করা ঠিক হয়নি। মেয়েটি এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পরবর্তীতে রোগীর বাবা আমার কাছে আসলে পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মিন্টুকে নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেই। কিন্তু ডাক্তার সাহেব সময় না দেয়া সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে ডা. এহসানুল বারী রাহাত এর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বুধবার একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় “স্যার ওটিতে আছেন, আমি উনার সহকারী”। ১ ঘন্টা পরে ফোন দিয়েন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ১ঘন্টা পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ডা. এহসানুল বারী রাহাত নিউরো সার্জন নয়। অপারেশন করা উনার ঠিক হয়নি। শিশু নিউরো সার্জারী অপারেশন করলে ভালো হতো। এবিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।