ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজার-২ নির্বাচনের দিন যতই গণিয়ে আসছে ততই পাল্টাচ্ছে ভোটের হিসেব-নিকেষ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০২:০৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৮৪৫ বার পড়া হয়েছে

কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় জমে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচনের দিন যতই গণিয়ে আসছে ততই পাল্টাচ্ছে ভোটের হিসেব-নিকেষ।

 

প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনায় সরগরম হয়েছে ভোটের মাঠ এমনকি গ্রামগঞ্জের বাজারের চায়ের দোকানে চলছে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। চলছে শেষ সময়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এ আসনে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মূল আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন ও নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, কুলাউড়া আসনে গত নির্বাচনে সুলতান মনসুর এমপি ছিলেন কিন্ত তিনি জনগণের পাশে খুব কম সময় ছিলেন। আবার অনেকে এমপি নির্বাচিত না হতে পেরে বিদেশে পাড়ি জমান। এবার নতুন করে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

ভোটের মাঠে তিনি একদম নতুন মুখ। তাঁর রাজনীতিসহ সকল কর্ম সিলেট কেন্দ্রীক। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এসব দিক দিয়ে গত করোনা মহামারি, বন্যাসহ সকল দুর্যোগে অধ্যক্ষ সফি আহমদ সলমান মানুষের পাশে সবসময় অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছিলেন। কিন্ত এবারের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা কেউই এসব দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে না থাকায় সমীকরণে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ সফি আহমদ সলমান রয়েছেন অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সিংহভাগ নেতা নৌকার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে তারা সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। পুরো উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ অন্য নেতাকর্মীরাও।

অপরদিকে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান বিগত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হোন। ওই নির্বাচনে নৌকার ভোটখ্যাত সবগুলো চা বাগানে তাঁর ব্যাক্তিগত জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ৯০ ভাগ ভোট পান।তিনি ১৯ বছর কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে তার বড়ভাই আ ফ ম মোছাদ্দিক আহমদ নোমান কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

বর্তমানে তাঁর ছোটভাই জাফর আহমদ গিলমান এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ম পালন করছেন। সফি আহমদ সলমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কুলাউড়ার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম। আলোকিত কুলাউড়া বিনির্মাণে আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন এই জনপদের অবহেলিত, নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।

বিগত করোনা মহামারি, ভয়াবহ বন্যাসহ সকল দুর্যোগে কুলাউড়ার মানুষের পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছিলাম। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বকালে সাধ্যমতো নানা উন্নয়নকাজ করেছি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবো।

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীসহ তার সমর্থকরা ব্যস্ত সময় পার করলেও ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত বাড়াতে চেষ্টা করছেন সব প্রার্থীই। এ আসন নৌকার জন্য উর্বর হলেও এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ট্রাক। দিন দিন ট্রাক প্রতীকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

এদিকে সাবেক দুইবারের এমপি এম এম শাহীন তৃণমূল বিএনপির সোনালীআঁশ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন সক্রিয়। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই নেতা ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তৎকালীন এমপি ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর আহমদকে পরাজিত করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। এ নির্বাচনে ব্যাক্তিগত জনপ্রিয়তা ও তৃণমূল বিএনপির সুবিধা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়ে গেলে অবাক হবার কিছুই থাকবেনা।

এ আসনের বর্তমান এমপি সুলতান মনসুর আহমদ আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন নৌকা প্রতীক না পেলে তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। নৌকা বঞ্চিত হওয়ায় তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

এআসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল মতিন (কাঁচি), জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের আছলাম হোসাইন রহমানী (মিনার) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. কামরুজ্জামান সিমু (কুলা)।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসন। এ আসনের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭২। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

মৌলভীবাজার-২ নির্বাচনের দিন যতই গণিয়ে আসছে ততই পাল্টাচ্ছে ভোটের হিসেব-নিকেষ

আপডেট সময় ০২:০৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪

কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় জমে উঠেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচনের দিন যতই গণিয়ে আসছে ততই পাল্টাচ্ছে ভোটের হিসেব-নিকেষ।

 

প্রার্থীদের প্রচার প্রচারনায় সরগরম হয়েছে ভোটের মাঠ এমনকি গ্রামগঞ্জের বাজারের চায়ের দোকানে চলছে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা। চলছে শেষ সময়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এ আসনে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মূল আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান (ট্রাক), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি এম এম শাহীন ও নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, কুলাউড়া আসনে গত নির্বাচনে সুলতান মনসুর এমপি ছিলেন কিন্ত তিনি জনগণের পাশে খুব কম সময় ছিলেন। আবার অনেকে এমপি নির্বাচিত না হতে পেরে বিদেশে পাড়ি জমান। এবার নতুন করে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

ভোটের মাঠে তিনি একদম নতুন মুখ। তাঁর রাজনীতিসহ সকল কর্ম সিলেট কেন্দ্রীক। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এসব দিক দিয়ে গত করোনা মহামারি, বন্যাসহ সকল দুর্যোগে অধ্যক্ষ সফি আহমদ সলমান মানুষের পাশে সবসময় অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছিলেন। কিন্ত এবারের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা কেউই এসব দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে না থাকায় সমীকরণে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ সফি আহমদ সলমান রয়েছেন অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সিংহভাগ নেতা নৌকার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে তারা সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। পুরো উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ অন্য নেতাকর্মীরাও।

অপরদিকে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান বিগত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হোন। ওই নির্বাচনে নৌকার ভোটখ্যাত সবগুলো চা বাগানে তাঁর ব্যাক্তিগত জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ৯০ ভাগ ভোট পান।তিনি ১৯ বছর কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে তার বড়ভাই আ ফ ম মোছাদ্দিক আহমদ নোমান কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

বর্তমানে তাঁর ছোটভাই জাফর আহমদ গিলমান এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ম পালন করছেন। সফি আহমদ সলমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কুলাউড়ার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম। আলোকিত কুলাউড়া বিনির্মাণে আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন এই জনপদের অবহেলিত, নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।

বিগত করোনা মহামারি, ভয়াবহ বন্যাসহ সকল দুর্যোগে কুলাউড়ার মানুষের পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছিলাম। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বকালে সাধ্যমতো নানা উন্নয়নকাজ করেছি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবো।

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীসহ তার সমর্থকরা ব্যস্ত সময় পার করলেও ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত বাড়াতে চেষ্টা করছেন সব প্রার্থীই। এ আসন নৌকার জন্য উর্বর হলেও এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক ট্রাক। দিন দিন ট্রাক প্রতীকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

এদিকে সাবেক দুইবারের এমপি এম এম শাহীন তৃণমূল বিএনপির সোনালীআঁশ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন সক্রিয়। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই নেতা ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তৎকালীন এমপি ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মনসুর আহমদকে পরাজিত করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। এ নির্বাচনে ব্যাক্তিগত জনপ্রিয়তা ও তৃণমূল বিএনপির সুবিধা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়ে গেলে অবাক হবার কিছুই থাকবেনা।

এ আসনের বর্তমান এমপি সুলতান মনসুর আহমদ আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন নৌকা প্রতীক না পেলে তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। নৌকা বঞ্চিত হওয়ায় তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

এআসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল মতিন (কাঁচি), জাতীয় পার্টির আব্দুল মালিক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এনামুল হক মাহতাব (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের আছলাম হোসাইন রহমানী (মিনার) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. কামরুজ্জামান সিমু (কুলা)।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসন। এ আসনের ১৩টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭২। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৩৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩।