ঢাকা ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুলতান মনসুর কি দলে ফিরছেন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:১০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

তমাল ফেরদৌস : সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ কি আওয়ামী লীগে ফিরছেন? এই গুঞ্জনে এখন মুখর মৌলভীবাজারসহ সমগ্র সিলেট বিভাগের রাজনৈতিক অঙ্গন। এক সময়ের নেতৃত্ব দ্বন্দ্বের রাজনীতি, আঞ্চলিকতা, কেন্দ্রীয় রাজনীতির রোষানলে দল থেক ছিটকে যাওয়া এই রাজনীতিবিদ কি ঘরে ফিরছেন সেটি এখন সব মহলে চাউর হচ্ছে।

তিনি এক সময়ের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৯ সালে ডাকসুর ভিপি ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ), ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে বিজয়ী মৌলভীবাজার -২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি একই আসনে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

সুলতান মনসুর যখন দল থেকে পদ পদবী হারান। তখন অনেকেই বলেছেন যে, তাঁর ভুলে পদটি হারিয়েছেন বা দল তাঁকে রাখেনি। ওই সময়ের যারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বোদ্ধা ছিলেন, তাঁরা অবশ্যই দেখেছেন তিনি যে মঞ্চ বক্তব্য রাখতেন, সেসব মঞ্চে উপস্থিত থাকতেন, আব্দুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, দেওয়ান ফরিদ গাজীর মতো বাঘা বাঘা নেতা। এসব বাঘা বাঘা নেতাদের টপকিয়ে তিনি ঝাঁঝালো বক্তব্য দিয়েছেন। এমনও দেখা গেছে, মঞ্চে এতো বড় বড় নেতা উপস্থিত থাকতেও তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লোকজন দাঁড়িয়ে থাকতো। একজন ছাত্রনেতা নিজের, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, সৎসাহস, কৌশল নিয়ে মানুষের মধ্যে আলাদা জায়গা তৈরী করেছিলেন। এমনকি জাতীয় নেতারা মঞ্চে থাকলেও তিনি সেখানে সবার মধ্যমনি হয়ে উঠতেন। ফলে দলের নীতি নির্ধারনী মহল, দলের স্থানীয় বিরোধী মহলসহ সবক্ষেত্রে তিনি ঈর্ষনীয় হয়ে উঠেন। তাঁকে সরানোর গোপন পাঁয়তারা শুরু হয়।

বরাবরের মতো তিনি সাহসী এবং নির্বিঘ্নে সত্য কথা বলে যেতেন। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বাঘা বাঘা নেতা তাঁর কাছে ধরাশায়ী হতেন। তিনি সাহস ও আত্মবিশ্বাস থেকে অনেক কথা বলেছেন। যার ভুল ব্যাখ্যা করে একসময় সুবিধাবাদীরা তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেয়। তখনকার প্রেক্ষাপটে নোংরা রাজনীতিকে মোকাবেলা করে দলে আর ফিরতে পারেন নি তিনি।

তবে তিনি দলে ফিরতে না পারলে তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠা বিশাল কর্মী বাহিনী এখন সিলেট বিভাগসহ সারা বাংলাদেশে রাজনীতিতে করছে। বড় বড় পদ পদবীতে থাকা এসব নেতারা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও তিনি বিভিন্ন সভা, সেমিনার, প্রচারণায় নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলেই দাবি করে আসছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া যেখানে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু আমি যাই করিনা কেন আমার শেকড় আওয়ামী লীগেই পুঁতে আছে।
সেই চিন্তা ভাবনা থেকে দলে ফেরার জন্য তিনি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে শেখ রেহানার সাথে তাঁর একটি ছবি ভাইরাল হলে নতুন করে তিনি আলোচনায় আসেন। তারপর গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক সভায় প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসা নিয়মতান্ত্রিক শুধু নয়, ভিন্ন অর্থ বহন করে বৈকি। কারণ যদি প্রধানমন্ত্রীর সাথে মনস্তাত্ত্বিক দুরত্ব থাকতো তাহলে পাশাপাশি বসার পরিবেশ থাকতো না। ইতিহাসের পাতায় এরকম পরিস্থতি তৈরী হয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়ে অনেকেই দলে ফিরেছেন তার ও উদাহরণ রয়েছে। তাই যারা এটাকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা মনে করছেন তাঁদের ভুল হতেও পারে।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ যখন দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন তখন আওয়ামী লীগ বাঘা বাঘা নেতাকর্মীতে ভরপুর একটি দল ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন। এখন দল অনেকটা প্রকৃত নেতৃত্ব সংকটে রয়েছে। সিলেট বিভাগ এর বাইরে নয়।ফলে সবকিছু বিবেচনায় রেখে দলের নীতি নির্ধারনী মহল নমনীয় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। এছাড়া সিলেটে তাঁর সমকক্ষ নেতাতো এখন নেই। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।

কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।

তমাল ফেরদৌস, কবি ও সাংবাদিক
০২/০৯/২০২৩

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

সুলতান মনসুর কি দলে ফিরছেন

আপডেট সময় ১২:১০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তমাল ফেরদৌস : সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ কি আওয়ামী লীগে ফিরছেন? এই গুঞ্জনে এখন মুখর মৌলভীবাজারসহ সমগ্র সিলেট বিভাগের রাজনৈতিক অঙ্গন। এক সময়ের নেতৃত্ব দ্বন্দ্বের রাজনীতি, আঞ্চলিকতা, কেন্দ্রীয় রাজনীতির রোষানলে দল থেক ছিটকে যাওয়া এই রাজনীতিবিদ কি ঘরে ফিরছেন সেটি এখন সব মহলে চাউর হচ্ছে।

তিনি এক সময়ের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৯ সালে ডাকসুর ভিপি ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ), ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে বিজয়ী মৌলভীবাজার -২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি একই আসনে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্য।

সুলতান মনসুর যখন দল থেকে পদ পদবী হারান। তখন অনেকেই বলেছেন যে, তাঁর ভুলে পদটি হারিয়েছেন বা দল তাঁকে রাখেনি। ওই সময়ের যারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বোদ্ধা ছিলেন, তাঁরা অবশ্যই দেখেছেন তিনি যে মঞ্চ বক্তব্য রাখতেন, সেসব মঞ্চে উপস্থিত থাকতেন, আব্দুস সামাদ আজাদ, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, দেওয়ান ফরিদ গাজীর মতো বাঘা বাঘা নেতা। এসব বাঘা বাঘা নেতাদের টপকিয়ে তিনি ঝাঁঝালো বক্তব্য দিয়েছেন। এমনও দেখা গেছে, মঞ্চে এতো বড় বড় নেতা উপস্থিত থাকতেও তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লোকজন দাঁড়িয়ে থাকতো। একজন ছাত্রনেতা নিজের, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, সৎসাহস, কৌশল নিয়ে মানুষের মধ্যে আলাদা জায়গা তৈরী করেছিলেন। এমনকি জাতীয় নেতারা মঞ্চে থাকলেও তিনি সেখানে সবার মধ্যমনি হয়ে উঠতেন। ফলে দলের নীতি নির্ধারনী মহল, দলের স্থানীয় বিরোধী মহলসহ সবক্ষেত্রে তিনি ঈর্ষনীয় হয়ে উঠেন। তাঁকে সরানোর গোপন পাঁয়তারা শুরু হয়।

বরাবরের মতো তিনি সাহসী এবং নির্বিঘ্নে সত্য কথা বলে যেতেন। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বাঘা বাঘা নেতা তাঁর কাছে ধরাশায়ী হতেন। তিনি সাহস ও আত্মবিশ্বাস থেকে অনেক কথা বলেছেন। যার ভুল ব্যাখ্যা করে একসময় সুবিধাবাদীরা তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেয়। তখনকার প্রেক্ষাপটে নোংরা রাজনীতিকে মোকাবেলা করে দলে আর ফিরতে পারেন নি তিনি।

তবে তিনি দলে ফিরতে না পারলে তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠা বিশাল কর্মী বাহিনী এখন সিলেট বিভাগসহ সারা বাংলাদেশে রাজনীতিতে করছে। বড় বড় পদ পদবীতে থাকা এসব নেতারা তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরও তিনি বিভিন্ন সভা, সেমিনার, প্রচারণায় নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলেই দাবি করে আসছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া যেখানে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু আমি যাই করিনা কেন আমার শেকড় আওয়ামী লীগেই পুঁতে আছে।
সেই চিন্তা ভাবনা থেকে দলে ফেরার জন্য তিনি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে শেখ রেহানার সাথে তাঁর একটি ছবি ভাইরাল হলে নতুন করে তিনি আলোচনায় আসেন। তারপর গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক সভায় প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসা নিয়মতান্ত্রিক শুধু নয়, ভিন্ন অর্থ বহন করে বৈকি। কারণ যদি প্রধানমন্ত্রীর সাথে মনস্তাত্ত্বিক দুরত্ব থাকতো তাহলে পাশাপাশি বসার পরিবেশ থাকতো না। ইতিহাসের পাতায় এরকম পরিস্থতি তৈরী হয়ে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়ে অনেকেই দলে ফিরেছেন তার ও উদাহরণ রয়েছে। তাই যারা এটাকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা মনে করছেন তাঁদের ভুল হতেও পারে।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ যখন দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন তখন আওয়ামী লীগ বাঘা বাঘা নেতাকর্মীতে ভরপুর একটি দল ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন। এখন দল অনেকটা প্রকৃত নেতৃত্ব সংকটে রয়েছে। সিলেট বিভাগ এর বাইরে নয়।ফলে সবকিছু বিবেচনায় রেখে দলের নীতি নির্ধারনী মহল নমনীয় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। এছাড়া সিলেটে তাঁর সমকক্ষ নেতাতো এখন নেই। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।

কারণ রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।

তমাল ফেরদৌস, কবি ও সাংবাদিক
০২/০৯/২০২৩