ঢাকা ১২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৭ নভেম্বর মণিপুরি মহারাসলীলা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৫৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে

কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা আগামী ২৭ নভেম্বর সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ ভগবার শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধারলীলাকে ঘিরে এ দিন পালিত হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রং ফুটছে। মন্ডপে মন্ডপে চলছে রং করানোর কাজ। এলাকার হাওয়ায় এখন নীরব সুর বাজছে। রাস আসছে। রাস আসছে। এই দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তাই মণিপুরি পল্লীর বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েরা নাচছে। নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নৃত্যকে নিখুঁত করার ঘষামাজার শেষ পর্যায়ে।

জানা যায়, এবার মাধবপুর জোড়া মন্ডপে ১৮১ তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। এবার হবে ৪১তম রাস উৎসব।

মণিপরি সম্প্র্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব “রাসলীলা”। রাসোৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে একদিনের আনন্দ উৎসবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপ প্রাঙ্গণ। রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও।

এদিকে মণিপুরি রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়াসমূহে চলছে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্র্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন। রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়।

কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগে থেকেই চলে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। রাসোৎসবকে সফল করতে প্রায় মাসখানেক ধরে কয়েকটি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলে। একেকটি মন্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষককে সহযোগিতা করতে একজন সহকারী প্রশিক্ষক আছেন। প্রশিক্ষক শিল্পীদের ঠিক করেন। এরপর সামাজিক বিধান মতো শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণের বাইরেও কেউ চাইলে রাসনৃত্যে অংশ নিতে পারেন। গোপীবেশী এই শিল্পীদের বয়স ১৬-২২ বছর। শুধু রাধার বয়স ৫-৬ বছর। মাধবপুরে তিনটি জোড়া মন্ডপের আওতায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাসলীলা দুই ভাগে বিভক্ত, গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা। গোষ্ঠলীলায় কৃষ্ণের বাল্যকালে মাঠে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে ধেনু চড়াবার মুহূর্তগুলো অনুকরণ করা হয়। গোষ্ঠলীলাকে ‘রাখালনৃত্য’ বা ‘রাখোয়াল’ বলা হয়ে থাকে। রাসলীলায় অভিনীত হয় ‘গোপীনৃত্য’।

মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারন সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবারে মাধবপুর জোড়া মন্ডপে ১৮১তম মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে চলবে পরদিন ব্রাহ্মমুহুর্ত পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই রাসোৎসব আনন্দময় করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া একইদিন উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

২৭ নভেম্বর মণিপুরি মহারাসলীলা

আপডেট সময় ১২:৫৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

কমলগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বৃহত্তর সিলেটের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা আগামী ২৭ নভেম্বর সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ ভগবার শ্রীকৃষ্ণ ও তার সখি রাধারলীলাকে ঘিরে এ দিন পালিত হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় এখন রাস উৎসবের রং ফুটছে। মন্ডপে মন্ডপে চলছে রং করানোর কাজ। এলাকার হাওয়ায় এখন নীরব সুর বাজছে। রাস আসছে। রাস আসছে। এই দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তাই মণিপুরি পল্লীর বাড়ির উঠোনে ছেলেমেয়েরা নাচছে। নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোনো জায়গায় চলছে রাসনৃত্যের মহড়া। কোনো জায়গায় রাখালনৃত্যের। এগুলো এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। নৃত্যকে নিখুঁত করার ঘষামাজার শেষ পর্যায়ে।

জানা যায়, এবার মাধবপুর জোড়া মন্ডপে ১৮১ তম রাস উৎসব। মাধবপুরের রাসমেলার আয়োজক হচ্ছে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ। মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়। উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। এবার হবে ৪১তম রাস উৎসব।

মণিপরি সম্প্র্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব “রাসলীলা”। রাসোৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকজন মেতে উঠবে একদিনের আনন্দ উৎসবে। মহারাত্রির আনন্দের পরশ পেতে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যটক, বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী লোকজনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপ প্রাঙ্গণ। রাসোৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মন্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও।

এদিকে মণিপুরি রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়াসমূহে চলছে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্র্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন। রাসোৎসবকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়।

কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগে থেকেই চলে রাসোৎসবের প্রস্তুতি। রাসোৎসবকে সফল করতে প্রায় মাসখানেক ধরে কয়েকটি বাড়িতে রাসনৃত্য এবং রাখালনৃত্যের প্রশিক্ষণ ও মহড়া চলে। একেকটি মন্ডপে আছেন একজন পুরোহিত। সেই পুরোহিতের পরামর্শে একজন প্রশিক্ষক ধর্মীয় বিধিবিধান মতো গোপী বা শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষককে সহযোগিতা করতে একজন সহকারী প্রশিক্ষক আছেন। প্রশিক্ষক শিল্পীদের ঠিক করেন। এরপর সামাজিক বিধান মতো শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণের বাইরেও কেউ চাইলে রাসনৃত্যে অংশ নিতে পারেন। গোপীবেশী এই শিল্পীদের বয়স ১৬-২২ বছর। শুধু রাধার বয়স ৫-৬ বছর। মাধবপুরে তিনটি জোড়া মন্ডপের আওতায় এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাসলীলা দুই ভাগে বিভক্ত, গোষ্ঠলীলা ও রাসলীলা। গোষ্ঠলীলায় কৃষ্ণের বাল্যকালে মাঠে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে ধেনু চড়াবার মুহূর্তগুলো অনুকরণ করা হয়। গোষ্ঠলীলাকে ‘রাখালনৃত্য’ বা ‘রাখোয়াল’ বলা হয়ে থাকে। রাসলীলায় অভিনীত হয় ‘গোপীনৃত্য’।

মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারন সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবারে মাধবপুর জোড়া মন্ডপে ১৮১তম মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে চলবে পরদিন ব্রাহ্মমুহুর্ত পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই রাসোৎসব আনন্দময় করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া একইদিন উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে।